পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ মনোরম মাথা নাড়িয়া বলিল, ই করি । এ উত্তর তাহার কাছে কেহই প্রত্যাশ করে নাই, আগুবাবু কুষ্ঠায় স্নান হইয়া পড়িলেন। শুধু কুষ্ঠিত হইল না কমল নিজে। কহিল, নাম ত আর কিছুই নয়, কেবল একটা শব্দ। যা দিয়ে বোঝা যায়, বহুর মধ্যে একজন আর একজনকে আহবান করচে। তবে অনেক লোকের অভ্যাসে বাধে এ-কথাও সত্যি। তারা এই শব্দটাকে নানারূপে অলঙ্কৃত করে শুনতে চায়। দেখেন না রাজারা তাদের নামের আগে পিছে কতকগুলো নিরর্থক বাক্য নিয়ে, কতকগুলো শ্ৰী জুড়ে তবে অপরকে উচ্চারণ করতে দেয় ? নইলে তাদের মৰ্য্যাদা নষ্ট নয়। এই বলিয়া সে হঠাৎ হাসিয়া উঠিয়া শিবনাথকে দেখাইয়া কহিলেন, যেমন ইনি। কখনো কমল বলতে পারেন না, বলেন, শিবানী। অজিতবাবু, আপনি বরঞ্চ আমাকে মিসেস শিবনাথ না বলে শিবানী বলেই ডাকুন। কথাটাও ছোট, বুঝবেও সবাই। অন্ততঃ আমি ত বুঝবই। কিন্তু কি যে হইল, এমন সুস্পষ্ট আদেশ লাভ করিয়াও অজিত কথা কহিতে পারিল না, প্রশ্ন তাহার মুখে বাধিয়াই রহিল । তখন বেলা শেষ হইয়া অভ্রাণের বাষ্পাচ্ছন্ন আকাশে অস্বচ্ছ জ্যোৎস্ন দেখা দিয়াছে, সেইদিকে পিতার দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া মনোরম বলিল, বাবা হিম পড়তে মুরু হয়েচে, আর না । এইবার ওঠে । আশুবাবু বলিলেন, এই যে উঠি মা । অবিনাশ বলিলেন, শিবানী নামটি বেশ। শিবনাথ গুণী লোক, তাই নামটিও দিয়েচেন মিষ্টি, নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়েচেনও চমৎকার। আপ্তবাবু উৎফুল্ল হইয়া বলিয়া উঠিলেন, শিবনাথ নয় হে অবিনাশ, উপরের— উনি। এই বলিয়া তিনি একবার আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া কহিলেন, আপ্তিকালের ঐ বুড়ে ঘটকটি এদের সব দিক দিয়ে মিল করবার জন্য যেন আহারনিদ্ৰা ত্যাগ করে লেগেছিলেন। বেঁচে থাকো । অকস্মাৎ অক্ষয় সোজা হইয় বার দুই-তিন মাথা নাড়িয়া ক্ষুদ্র চক্ষুদ্বয় যথাশক্তি বিস্ফারিত করিয়া কহিল, আচ্ছ, আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি কি ? ‘কমল কহিল, কি প্রশ্ন ? . অক্ষয় বলিল, আপনার সঙ্কোচের বালাই ত নেই তাই জিজ্ঞেস করি, শিবানী নামটি তবেশ, কিন্তু শিবনাথবাবুর সঙ্গে কি আপনার সত্যই বিবাহ হয়েছিল ? আপ্তবাবু মুখ কালিবর্ণ করিয়া কহিলেন, বলেন কি অক্ষয়বাবু? : 8Հ f