পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ লোকের চোখের স্বমুখে সকলকে উপেক্ষা করে ঘটে চলেচে এই হয়েচে আমার প্রতি আপনার শ্রদ্ধার আকর্ষণ। হরেনবাবু, পৃথিবীতে মানুষের শ্রদ্ধা আমি এত বেশি পাইনি যে, অবহেলায় না বলে অপমান করতে পারি, কিন্তু আমার সম্বন্ধে যেমন অনেক জেনেচেন, তেমনি এটাও জেনে রাখুন যে, অক্ষয়বাবুদের অশ্রদ্ধার চেয়েও এ শ্রদ্ধা আমাকে পীড়া দেয়। সে আমার সয়, কিন্তু এর বোঝা দুঃসহ। হরেন্দ্র পূর্বের মতই ক্ষণকাল মৌন হইয়া রহিল। কমলের বাক্য, বিশেষ করিয়া তাহার কণ্ঠস্বরের শান্ত-কঠোরতায় সে অন্তরে অপমান বোধ করিল। খানিক পরে জিজ্ঞাসা করিল, মত এবং আচরণের অনৈক্য সত্ত্বেও যে একজনকে শ্রদ্ধ করা যায়, অন্ততঃ আমি পারি, এ আপনার বিশ্বাস হয় না ? কমল অতিশয় সহজে তখনই জবাব দিল, বিশ্বাস হয় না এ ত আমি বলিনি হরেনবাবু ; আমি বলেচি, এ শ্রদ্ধা আমাকে পীড়া দেয়। এই বলিয়া একটুখানি থামিয়া কহিতে লাগিল, মত এবং নীতির দিক দিয়ে অক্ষয়বাবুর সঙ্গে আপনাদের বিশেষ কোন প্রভেদ নেই। তার বহু স্থলে অনাবশ্যক ও অত্যধিক রূঢ়তা না থাকলে আপনার সকলেই এক, ও শ্রদ্ধার দিক দিয়েও এক। শুধু আমি যে নিজের লজ্জায় সঙ্কোচে লুকিয়ে বেড়াইনে আমার এই সাহসটুকুই আপনাদের সমাদর লাভ করেচে। এর কতটুকু দাম হরেনবাবু? বরঞ্চ ভেবে দেখলে মনের মধ্যে বিতৃষ্ণই আসে যে, এর জন্তই আমাকে এতদিন বাহবা দিয়ে আসছিলেন। হরেন্দ্র বলিল, বাহবা যদি দিয়েই থাকি সে কি অসঙ্গত ? সাহস জিনিসটা কি সংসারে কিছুই নয় ? কমল কহিল, আপনার সকল প্রশ্নকেই এমন একান্ত করে জিজ্ঞাসা করেন কেন ? কিছুই নয় এ-কথা ত বলিনি। আমি বলছিলুম এ-বস্তু সংসারে দুর্লভ এবং দুর্লভ বলেই চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দেয়। কিন্তু এর চেয়েও বড় বস্তু আছে। বাইরে থেকে হঠাৎ তাকে সাহসের অভাব বলেই দেখতে লাগে। হরেন্দ্র মাথা নাড়িয়া কহিল, বুঝতে পারলাম না। আপনার অনেক কথাই অনেক সময়ে হেঁয়ালির মত ঠেকে, কিন্তু আজকের কথাগুলো যেন তাদেরও ডিঙিয়ে গেল । মনে হচ্চে যেন আজ আপনি অত্যন্ত বিমনা । কার জবাব কাকে দিয়ে যাচ্চেন খেয়াল নেই। үг কমল কহিল, তাই বটে। ক্ষণাকাল'স্থির থাকিয়া কহিল, হবেও বা । সত্যকার শ্রদ্ধা পাওয়া যে কি জিনিস সে হয়ত এতকাল নিজেও জানতুম না । সেদিন হঠাৎ যেন চমকে গেলুম। হরেনবাবু, আপনি দুঃখ করবেন না, কিন্তু তার সঙ্গে তুলনা Ꮌ☾ᏔᏱ