পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ পরদিন পাচকড়ির স্ত্রী স্বামী লইয়া বাপের বাড়ি পলাইয় গেল। ভগা কাওরা অনেকরাত্রে বিল হইতে মাছ, ধরিয়া বাড়ি ফিরিবার পথে গাজার ঝেণকে নাকি বিস্তাম্বন্দরের মালিনীর গান গাহিয়া যাইতেছিল। ব্রাহ্মণপাড়ার অবিনাশের কানে যাওয়ায়, সে তার নাক দিয়া রক্ত বাহির করিয়া তবে ছাড়িয়া দিল। দুর্গ ডোমের চৌদ-পনর বছরের ছেলে বিড়ি খাইয়া মাঠে যাইতেছিল ; অপূৰ্ব্বর দলের ছোকরার চোখে পড়ায়, সে তাহার পিঠের উপর সেই জলন্ত বিড়ি চাপিয়া ধরিয়া ফোস্কা তুলিয়া দিল। এমনি করিয়া অপূৰ্ব্বর হিন্দুধৰ্ম্ম-প্রচারিণী ও দুর্নীতি-দলনী সভা ভানুমতীর আমগাছের মত সদ্য-সদ্যই ফুলে-ফলে কালীদহ গ্রামটাকে একেবারে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিল। এইবার গ্রামের মানসিক উন্নতির দিকে নজর দিতে গিয়া অপূৰ্ব্বর চোখে পড়িল যে, স্কুলের লাইব্রেরীতে শশীভূষণের দেড়খানা মানচিত্র ও বঙ্কিমের আড়াইখানা উপন্যাস ব্যতীত আর কিছুই নাই। এই দীনতার জন্য সে হেডমাষ্টারকে অশেষরূপে লাঞ্ছিত করিয়া অবশেষে নিজেই লাইব্রেরী গঠন করিতে কোমর বাধিয়া লাগিয়া গেল। তাহার সভাপতিত্বে চাদার খাতা, আইন-কাচনের তালিকা এবং পুস্তকের লিষ্ট তৈরী হইতে বিলম্ব হইল না। এতদিন ছেলেদের ধৰ্ম্মপ্রচারের উৎসাহ গ্রামের লোকেরা কোনমতে সহিয়াছিল ; কিন্তু দুই-একদিনের মধ্যেই তাহদের চাদ আদায়ের উৎসাহ গ্রামের ইতর-ভদ্র গৃহস্থের কাছে এমনি ভয়াবহ হইয়া উঠিল যে, খাতা-বগলে ছেলে দেখিলেই তাহারা বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ করিয়া ফেলিতে লাগিল। বেশ দেথা গেল, গ্রামে ধৰ্ম্ম-প্রচার দুনীতি-দলনের রাস্ত যতখানি চওড়া পাওয়া গিয়াছিল, লাইব্রেরীর জন্য অর্থ-সংগ্রহের পথ তাহার শতাংশের একাংশও প্রশস্ত নয়। অপূৰ্ব্ব কি করিবে ভাবিতেছে, এমন সময় হঠাৎ একটা ভারি সুরাহা চোখে পড়িল। স্কুলের অদূরে একটা পরিত্যক্ত পোড়ে ভিটার প্রতি একদিন অপূৰ্ব্বর দৃষ্টি আকৃষ্ট হইল। শোনা গেল, ইহা একাদশী বৈরাগীর। অমুসন্ধান করিতে জানা গেল, লোকেটা কি একটা গৰ্হিত সামাজিক অপরাধ করায় গ্রামের ব্রাহ্মণের তাহার ধোপা, নাপিত, মুী প্রভৃতি বন্ধ করিয়া বছর-দশেক পূর্বে উদ্বাস্ত করিয়া নির্বাসিত করিয়াছেন। এখন সে ক্রোশ-দুই উত্তরে বারুইপুর গ্রামে বাস করিতেছে। লোকটা নাকি টাকার কুমীর ; কিন্তু তাঁহার সাবেক নাম যে কি, তাহ কেহই বলিতে পারে না—হাড়ি-ফাটার ভয়ে বহুদিনের অব্যবহারে মামুষের স্থতি হইতে একেবারে লুপ্ত' হইয়া গেছে। তদবধি এই একাদশী নামেই বৈরাগী মহাশয় স্বপ্রসিদ্ধ। অপূর্ব তাল ঠুকিয়া কহিল, টাকার কুমীর । সামজিক কদাচার। তবে ত এই ব্যাটাই লাইব্রেরীর অর্ধেক ভার বহন করিতে বাধ্য। |రినy