পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় ফিরাইয়া হাসিয়া ফেলিলেন। তারক এতক্ষণে নিঃসন্দেহে বুঝিল ইনিই ব্ৰজবাৰু। তাহার আনন্দ ও বিস্ময়ের অবধি রহিল না। ব্ৰজবাবু অনুরোধ করিলেন, দাড়িয়ে থেকে না নতুন-বোঁ, বোসে। । তিনি ফিরিয়া আসিয়া বসিলে ব্ৰজবাবু বলিতে লাগিলেন, পরন্ত রেণুর বিয়ে । ছেলেটি স্বাস্থ্যবান মুন্দর, লেখা-পড়া করেচে—আমাদের জানা ঘর। বিষয়-সম্পত্তি টাকা-কড়িও মন্দ নেই। এই কলকাতা সহরেই খান-চারেক বাড়ি আছে। এ-পাড়া ও-পাড়া বললেই হয়, যখন ইচ্ছে মেয়ে-জামাইকে দেখতে পাওয়া যাবে। মনে হয় তো সকল দিকেই ভালো হোলো । একটুখানি থামিয়া বলিলেন, আমাকে জানোই নতুন-বে, সাধ্যি ছিল না নিজে এমন পাত্র খুজে বার করি। সবই গোবিন্দর কৃপা ! এই বলিয়া তিনি ডান হাতটা কপালে ঠেকাইলেন। কন্যার মুখ-সৌভাগ্যের সুনিশ্চিত পরিণাম কল্পনায় উপলব্ধি করিয়া তাহার সমস্ত মুখ স্নিগ্ধ প্রসন্নতায় উজ্জল হইয়া উঠিল। সকলেই চুপ করিয়া রহিলেন, একটা তিক্ত ও একান্ত অপ্রীতিকর বিরুদ্ধ প্রস্তাবে এই মায়াজাল তাহারই চক্ষের সম্মুখে ছিন্ন-ভিন্ন করিয়া দিতে কাহারও প্রবৃত্তি হইল না। ব্ৰজবাবু বলিলেন, আমাদের রাখাল-রাজাকে তো আর চিঠিতে নিমন্ত্রণ করা যায় না, ওকে নিজে গিয়ে ধরে আনতে হবে । ও ছাড়া আমার করবে-কৰ্ম্মাবেই বা কে। কাল রাত্রে ফিরে গিয়ে রেণুর মুখে যখন খবর পেলাম রাজু এসেছিলো, কিন্তু দেখা হয়নি—তার বিশেষ প্রয়োজন, কাল সন্ধ্যায় আবার আসবে— তখন স্থির করলাম এ স্বযোগ আর নষ্ট হতে দিলে চলবে না—যেমন করে হোক খুজে-পেতে তার বাসায় গিয়ে আমাকে ঐ ক্রটি সংশোধন করতেই হবে। তাই দুপুরবেলায় আজ বেরিয়ে পড়লাম। কিন্তু কার মুখ দেখে বেরিয়েছিলাম মনে নেই, আমার এক-কাজে কেবল দু'কাজ নয়, আমার সকল কাজ আজ সম্পূর্ণ হোলো । স্পষ্ট বুঝা গেল তাহার ভাগ্য-বিড়ম্বিতা একমাত্র কন্যার-বিবাহ ব্যাপারকে লক্ষ্য করিয়াই তিনি এ কথা উচ্চারণ করিয়াছেন। মেয়েটা যেন তাহার অপরিজ্ঞাত জীবন-যাত্রার পূৰ্ব্বক্ষণে জননীর অপ্রত্যাশিত আশীৰ্ব্বাদ লাভ করিল। রাখাল অত্যন্ত নিরহের মত মুখ করিয়া কহিল, বেরোবার সময় মামাবাবু ছিলেন বলে কি মনে পড়ে ? কেন বলে তো ? তিনি ভাগ্যবান লোক, বেরোবার সময়ে তার মুখ দেখে থাকলে হয়তো— · ও—তাই। ব্রজবাবু হাসিয়া উঠিলেন। + २७