পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& বাসায় পৌঁছিয়া রাখাল দুইখান পত্র পাইল-দুই-ই বিবাহের ব্যাপার। এক খানায় ব্রজবিহারী জানাইয়াছেন, রেণুর বিবাহ এখন স্থগিত রহিল এবং সংবাদটা নতুন-বোঁকে যেন জানানো হয়। অন্যান্ত কয়েকটা মামুলি কথার পরে তিনি চিঠির শেষের দিকে লিখিয়াছেন, নানা হাঙ্গামায় সম্প্রতি অতিশয় ব্যস্ত, আগামী শনিবার বিকালের দিকে নিজে তোমার বাসায় গিয়া সমুদয় বিষয় বিস্তারিতভাবে মুখে বলিব । দ্বিতীয় পত্র আসিয়াছে কর্তার নিকট হইতে। অর্থাৎ যাহার ছেলে-মেয়েকে সে পড়ায় । তাইপোর বিবাহ হঠাৎ স্থির হইয়াছে দিল্লীতে, কিন্তু অতদূরে যাওয়া তাহার নিজের পক্ষে সম্ভবপর নয় এবং তেমন বিশ্বাসী লোকও কেহ নাই, সুতরাং বরকর্তী সাজিয়। রাখালকেই রওনা হইতে হইবে । সামনের রবিবারে যাত্রা না করিলেই নয়, অতএব শীঘ্ৰ আসিয়া দেখা করিবে । এই কয়দিনের কামাইয়ের জন্য তিনি ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার ক্ষতির উল্লেখ করেন নাই, ইহাই রাখাল যথেষ্ট মনে করিল। সে যাই হোকৃ, মোটের উপর দুইটি খবরই ভালো । রেণুর বিবাহ ব্যাপারে তাহার মনের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগ ছিল। ‘এখন স্থগিত থাকার অর্থ বেশ স্পষ্ট না হলেও, পাগল বরের সহিত বিবাহটা চুকিয়া যে যায় নাই, ইহাতেই সে পুলকিত হইল! দ্বিতীয় দিল্লী যাওয়া । ইহাও নিরানন্দের নহে। সেখানে প্রাচীনদিনের স্মৃতিচিহ্ন বিদ্যমান, এতদিন যে-সকল কথা কেবল পুস্তকে পড়িয়াছে ও লোকের মুখে শুনিয়াছে, এবার এই উপলক্ষে সমস্ত চোখে দেখা ঘটবে। পরদিন সকালেই সে চিঠি লইয়া নতুন-মার সঙ্গে দেখা করিল, তিনি হাসিমুখে জানাইলেন শুভ-সংবাদ পুৰ্ব্বাহ্রেই অবগত হইয়াছেন, কিন্তু বিস্তারিত বিবরণের অপেক্ষায় অনুক্ষণ অধীর হইয়া আছেন। একটা প্রবল অন্তরায় যে ছিলই তাহা নিঃসন্দেহ, তথাপি কি করিয়া ঐ শাস্ত দুৰ্ব্বল প্রকৃতির মানুষটি একাকী এতবড় বাধা কাটাইয়া উঠিলেন তাহা সত্যিই বিস্ময়কর। রাখাল কহিল, রেণু নিশ্চয়ই তার বাপের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল নতুন-মা, নইলে কিছুতেই এ বিয়ে বন্ধ করা যেত না । নতুন-মা আস্তে আস্তে বলিলেন, জানিনে তো তাকে, হতেও পারে বাবা। . রাখাল জোর দিয়া বলিল, কিন্তু আমি তো জানি । তুমি দেখে নিয়ো মা, আমার অহমান সত্যি। সে নিজে ছাড়া হেমন্তবাবুকে কেউ থামাতে পারতে না । নতুন-মা আর তর্ক করিলেন না, বলিলেন, যাই হোক, শনিবার বিকালে আমিও তোমার ওখানে গিয়ে হাজির থাকবে রাজু, সব ঘটনা নিজের কানেই শুনৰো । 9 *