পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রহ আলিবার পূৰ্ব্বে দেখা করিয়া আসিতে পারে নাই বলিয়া দুঃখ জানাইয়াছে। নতুন-মা ও ব্রজবাবুকে প্ৰণাম নিবেদন করিয়াছে এবং পত্রের উপসংহারে আশা করিয়াছে, অনতিকাল মধ্যেই দিন-কয়েক ছুটি-লইয়া না বলিয়া চলিয়া আসার অপরাধে স্বয়ং গিয়া ক্ষমা-ভিক্ষা করিবে। ইহাও লিখিয়াছে যে রেণুর বিবাহ বন্ধ হওয়ার সংবাদ সে জানিয়াই আসিয়াছে। রাখাল চিঠিটা পকেটে রাখিয়া নিশ্বাস ফেলিল, যাক ট্যাক্সিভাড়াটা বঁচিল । পরদিন বিকালে রাখাল নূতন তোরঙ্গে কাপড়-চোপড় গুছাইয়া তুলিতেছিল, ফিরিতে দিন-দশেক দেরি হইবে, নতুন-মা আসিয়া উপস্থিত হইলেন। রাখাল প্ৰণাম করিয়া চৌকি অগ্রসর করিয়া দিল, তিনি বসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, কাল রাত্রেই তোমাদের যেতে হবে বুঝি বাবা ? ই মা, কালই সবাইকে নিয়ে রওনা হতে হবে । ফিরতে দিন-আষ্টেক দেরি হবে বোধ হয় ? ইা মা, আট-দশদিন লাগবে। নতুন-মা ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ক'টা বাজলে রাজু ? রাখাল দেয়ালের ঘড়ির পানে চাহিয়া বলিল, পাচটা বেজে গেছে । আমার ভয় ছিল আপনার আসতেই হয়তো বিলম্ব হবে, কিন্তু আজ কাকাবাবুই দেরি করলেন। দেরি হোক্ বাবা, তিনি এলে বাচি । রাখাল হাসিয়া বলিল, পাগলের সঙ্গে বিয়েটা যখন বন্ধ হয়ে গেছে তখন ভাবনার তো আর কিছু নেই মা ! তিনি না আসতে পারলেও ক্ষতি নেই। নতুন-মা মাথা নাড়িয়া বলিলেন, না বাবা, কেবল রেণুই তো নয়, তোমার কাকাবাবুও রয়েচেন যে। আমি কেবলই ভাবি ঐ নিরীহ শান্ত মানুষ না জানি একলা কত লাঞ্ছনা, কত উৎপীড়নই সহ করেচেন। বলিতে বলিতে র্তাহার চক্ষু সজল হইয়া উঠিল। রাখাল মনে মনে মামাবাবু হেমন্তকুমারের চাকার মতো মস্ত মুখখানা স্মরণ করিয়া নীরব হইয়া রহিল । এ কাজ যে সহজে হয় নাই তাহা নিশ্চয়। নতুন-মা বলিতে লাগিলেন, এ বিয়ে স্থগিত রইলো তিনি এইমাত্র লিখেচেন ; কিন্তু কিছুদিনের জন্যে না চিরদিনের জন্যে সে তো এখনো জানতে পারা যায়নি রাজু। রাখাল বলিয়া উঠিল, চিরদিনের জন্তে মা, চিরদিনের জন্তে। ঐ পাগলদের ঘরে আপনার রেণু কখনো পড়বে না, আপনি নিশ্চিন্ত হোন। নতুন-ম৷ বলিলেন, ভগবান তাই করুন ; কিন্তু ঐ দুৰ্ব্বল মানুষটির কথা ভেবে মনের মধ্যে কিছুতে স্বস্তি পাচ্ছিনে রাজু। দিনরাত কত চিন্তা কত-রকমের ভয়ই যে হয় সে আর আমি বলবো কাকে ? s: “