পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রহ

 জীবানন্দ। (সবিস্ময়ে) একলা? এই অন্ধকার রাত্রে? ভারী কষ্ট হবে যে! (হাসিতে লাগিল।)

 ষোড়শী। না, আমাকে এখুনি যেতেই হবে।

 জীবানন্দ। (সহাস্যে) বেশ ত, টাকা না হয় নাই দেবে ষোড়শী। তা ছাড়া আরো অনেক রকমের সুবিধে—

 ষোড়শী। আপনার টাকা, আপনার সুবিধা আপনারই থাক্‌, আমাকে যেতে দিন।

[কয়েক পা অগ্রসর হইয়া সেই পাইকদের সম্মুখে কিছুদূরে বসিয়া থাকিতে দেখিয়া আপনিই থমকিয়া দাড়াইল।]

 জীবানন্দ। (মুখ অন্ধকার করিয়া কঠিন-স্বরে) তুমি মদ খাও?

 ষোড়শী। না।

 জীবানন্দ। তোমার কয়েকজন পুরুষ বন্ধু আছে শুনেছি। সত্যি?

 ষোড়শী। (মাথা নাড়িয়া) না, মিছে কথা।

 জীবানন্দ। (ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া!) তোমার পূর্ব্বেকার সকল ভৈরবীই মদ খেতেন— সত্যি? মাতঙ্গী ভৈরবীর চরিত্র ভালো ছিলো না—এখনো তার সাক্ষী আছে। সত্যি, না মিছে?

 ষোড়শী। (লজ্জিত মৃদুকণ্ঠে) সত্যি বলেই শুনেচি।

 জীবানন্দ। শুনেচ? ভালো। তবে হঠাৎ তুমিই বা এমন দলছাড়া, গোত্রছাড়া ভালো হতে গেলে কেন? (হঠাৎ সোজা উঠিয়া বসিয়া পরুষ-কণ্ঠস্বরে) মেয়েমানুষের সঙ্গে তর্কও আমি করিনে, তাদের মতামতও কখনো জানতে চাইনে। তুমি ভালো কি মন্দ, চুল-চিরে তার বিচার করবার ও আমারও সময় নেই। আমি বলি, চণ্ডীগড়ের সাবেক ভৈববীদের যেভাবে কেটেচে তোমারও তেমনভাবে কেটে গেলেই যথেষ্ট। আজ তুমি এই বাড়িতেই থাকবে।

[হুকুম শুনিয়া। ষোড়শী বজ্রাহতের ন্যায় একেবারে কাঠ হইয়া গেল।]

 জীবানন্দ। তোমার সম্বন্ধে কি করে যে এতটা সহ্য করেচি জানিনে? আর কেউ এ বেয়াদপি করলে এতক্ষণ তাঁকে পাইকদের ঘরে পাঠিয়ে দিতুম। এমন অনেককে দিয়েচি।

 ষোড়শী। (অকস্মাৎ কাঁদিয়া ফেলিয়া, গলায় আঁচল দিয়া করজোড়ে) আমার যা-কিছু আছে সব নিয়ে আমাকে ছেড়ে দিন।

 জীবানন্দ। কেন বল ত? এ-রকম কান্নাও নতুন নয়, এ-রকম ভিক্ষেও এই নতুন শুনচিনে! কিন্তু তাদের সব স্বামি-পুত্র ছিল—কতকটা না হয় বুঝতেও পারি।

১২