পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় মাটিতে নী—মাটিতে না, বড় বৃলো। আমি আসন দিচ্চি, বলিয়া হাতের পাটাে তাড়াতাড়ি নামাইয়া রাখিতেছিলেন, সবিতা হাত বাড়াইয়া বাধা দিল—করচে কি ? তুমি হাতে করে আসন দিলে আমি বসবো কি করে। তা বটে। কিন্তু এখন আর দোষ নাই—দিই না ও-ঘর থেকে একটা এনে ? না ! সবিতা সেইখানে মাটিতে বসিয়া পডিয়া বলিলেন, দোষ সেদিনও ছিল, আজও আছে, মরণের পরেও থাকবে মেজকর্তা। কিন্তু সে-কথা আজ থাক। বামন কি পাওয়া যাচ্চে না ? পাওয়া অনেক যায় নতুন-বোঁ, কিন্তু গলায় একটা পৈতে থাকলেই তো হাতে খাওয়া যায় না | রাখাল কাল একজনকে ধরে এনেছিল, কিন্তু বিশ্বাস করতে পারলাম না। আবার কাল একজনকে ধরে আনবে বলে গেছে। কিন্তু এ লোকটা যে তোমার জেরায় টিকবে না মেজকর্তা । ব্ৰজবাৰু হাসিলেন, কহিলেন, আশ্চৰ্য্য নয়, অন্তত সেই ভয়ই করি। কিন্তু উপায় কি ! সবিতা কহিলেন, আমি যদি কাউকে ধরে এনে বলি রাখতে—রাখবে মেজকর্তা ? ব্ৰজবাবু বলিলেন, নিশ্চয় রাখবো । জেরা করবে না ? ব্ৰজবাবু আবার হাসিলেন, বলিলেন, না গো না, করবো না । এটুকু জানি, তোমার জেরায় পাশ করে তবে সে আসবে। সে আরও কঠিন। যে যাই করুক, তুমি যে বৃড়ো-বামুনের জাত মারবে না তাতে সন্দেহ নেই । আমি বুঝি ঠকাতে পারিনে ? না, পারো না । মানুষকে ঠকানো তোমার স্বভাব নয়। সবিতার দুই চোখ জলে ভরিয়া আসিতেই তাড়াতাড়ি মুখ ফিরাইয়া লইলেন, পাছে ঝরিয়া পড়িলে ব্রজবাবু দেখিতে পান। রাখাল আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহার দুই হাতে দুটা পুটুলি, একটায় তরকারি, অন্যটায় সাগু বার্লি মিছর ফল-মূল প্রভৃতি রোগীর পথ্য। নতুন-মাকে দেখিয়া প্রথমে সে আশ্চৰ্য্য হইল, তার পরে হাতের বোঝা নামাইয়া রাখিয়া পায়ের ধূলা লইয়া প্ৰণাম করিল। ব্রজবাবুকে কহিল, আজ বড্ড দেরী হয়ে গেল কাকাবাবু, এবার আপনি ঠাকুর-ঘরে যান, উদ্যোগ আয়োজন করে নিন, আমি নেয়ে এসে বাকী রান্নাটুকু সেরে ফেলি। এই বলিয়া সে একমুহূৰ্ত্ত রান্নার দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া কহিল, কড়ায় ওটা কি ফুটচে ? ፃ?