পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করার সময় সমস্যা ছিল।
ষোড়শী

গিয়ে সমস্ত জানিয়েচেন। কেবল তাতেই এতটা হ’তো না, কে সাহেবের নিজেরই আমার উপর ভারী রাগ। গত বৎসর দু'বার ফাঁদে ফেলবার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারেনি— আজ একেবারে হাতে হাতে ধরে ফেলেচে— (একটু হাসিল। )

 এককড়ি। (মুখ চুন করিয়া ) হুজুর, এবার বোধ হয় আমাদেরও আর রক্ষা নেই।

 জীবানন্দ। সম্ভব বটে। ( ষোড়শীকে ) শোধ নিতে চাও ত এই-ই সময়। আমাকে জেলে দিতেও পার।

 ষোড়শী। এতে জেল হবে কেন?

 জীবানন্দ। আইন। তা ছাড়া, কে-সাহেবের হাতে পড়েচি। বাদুড়বাগান মেসে থাকতে এরই কাছে একবার দিন-কুড়ি হাজত-বাসও হয়ে গেছে। কিছুতে জামিন দিলে না—আর জামিনই বা তখন হ’তো কে!

 ষোড়শী। (উৎসুক-কণ্ঠে ) আপনি কি কখনো বাদুড়বাগানের মেসে ছিলেন?

 জীবানন্দ। হাঁ। ওই সময়ে একটা প্রণয়কাণ্ডের বৃন্দে হয়েছিলুম—ব্যাটা আয়ান ঘোষ কিছুতে ছাড়লে না—পুলিশে দিলে। যাক, সে অনেক কথা। সে আমাকে ভোলেনি, বেশ চেনে। আজও পালাতে পারতুম, কিন্তু ব্যথায় শয্যাগত হয়ে পড়েচি, নড়বার জো নেই।

 ষোড়শী। ( কোমল-কণ্ঠে) ব্যথাটা কি আপনার কমচে না?

 জীবানন্দ। না, তা ছাড়া এ সারবার ব্যথা ও নয়।

 ষোড়শী। (কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া) আমাকে কি করতে হবে?

 জীবানন্দ। শুধু বলতে হবে তুমি নিজের ইচ্ছায় এসেচ, নিজের ইচ্ছায় এখানে আচ। তার বদলে তোমাকে সমস্ত দেবোত্তর ছেড়ে দেব, হাজার টাকা নগদ দেব, আর নজরের টাকার ত কথাই নেই।

 [এককড়ি কি বলিতে যাইয়া ষোড়শীর মুখের পানে চাহিয়া থামিয়া গেল। ]

 ষোড়শী। ( সোজা হাসিয়া ) এ-কথা স্বীকার করার অর্থ বোঝেন? তার পরেও কি আমার জমিতে, টাকাকড়িতে প্রয়োজন থাকতে পারে বলে আপনি বিশ্বাস করেন?

 জীবানন্দ (বিবর্ণ-মুখে ) তাই বটে ষোড়শী, তাই বটে। জীবনে আজও ত তুমি পাপ করোনি—ও তুমি পারবে না সত্যি। (একটু হাসিয়া) টাকাকড়ির বদলে যে সম্রম বেচা যায় না-ও যেন আমি ভুলেই গেছি। তাই হোক, যা সত্যি তাই তুমি ব’লো—জমিদারের তরফ থেকে আর কোনো উপদ্রব তোমার ওপর হবে না।