পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষোড়শী

যে সব বলাবলি করে মা, তুমি নাকি ওঁকেই সে-রাত্রে হাকিমের হাত থেকে রক্ষে করেচ? না-কি বলেচ, তোমাকে ধরে নিয়ে কেউ যায়নি, নিজে ইচ্ছে করেই গিয়েছিলে?

 ষোড়শী। এমন ত হতে পারে সাগর, আমি সত্যি কথাই বলেছিলাম।

 সাগর। তাই ত বিষম খটকা লেগেচে মা, তোমার মুখ দিয়ে ত কখনো মিছে কথা বার হয় না। তবে এ কি! কিন্তু সে যাই হোক, যাই কেন না গ্রামসুদ্ধ লোক বলে বেড়াক, আমরা ক’ঘর ছোটজাত তোমার ভূমিজ প্রজারা তোমাকেই মা বলে জেনেচি, যদি চণ্ডীগড় ছেড়ে চলে যাও মা, আমরাও তোমার সঙ্গে যাব, কিন্তু যাবার আগে একবার জানিয়ে দিয়ে যাব যে কারা গেল। [দ্রুতপদে প্রস্থান]

 ষোড়শী। সাগর! একটা কথা তোকে বলতে পারলেম না বাবা, তোদের দায়িত্ব হয়ত আর বইতে পারব না।

[এককড়ির প্রবেশ]

 ষোড়শী। কে, এককড়ি?

 এককড়ি। (সসম্বমে) আপনার কাছেই এলাম। হুজুর একবার আপনাকে স্মরণ করেচেন।

 ষোড়শী। কোথায়?

 এককড়ি। কাছারিতে বসে প্রজাদের নালিশ শুনছেন। যদি অনুমতি করেন ত পালকী আনতে পাঠাই।

 ষোড়শী। পাল্কী? এটি তার প্রস্তাব, না তোমার সুবিবেচনা এককড়ি?

 এককড়ি আঞ্জে, আমি ত চাকর, এ হুজুরের স্বয়ং আদেশ।

 ষোড়শী। (হাসিয়া) তোমার হুজুরের বিবেচনা আছে তা মানি, কিন্তু সম্প্রতি পালকী চড়লার আমার ফুরসং নেই এককড়ি। হুজুরকে বলে আমার অনেক কাজ।

 এককড়ি। ও-বেলায় কিংবা কাল সকালেও কি সময় হবে না?

 ষোড়শী। না।

 এককড়ি। কিন্তু হলে ভাল হ’তো। আরও দশজন প্রজার নালিশ আছে কি-না।

 ষোড়শী। (কঠোর-স্বরে) তাঁকে বলো এককড়ি, বিচার করার মত বুদ্ধি থাকে ত তাঁর নিজের প্রজাদের করুন গে। আমি তাঁর প্রজা নই, আমার বিচার করবার জন্তে রাজার আদালত আছে।

২৭