জীবানন্দ। তা বুঝেচি, নইলে এখানে আনবে কেন? কিন্তু দেখবার সময় আমার এখনও হবে না, অন্য সময়েও হবে না। কিন্তু ব্যাপারটা বাইরে থেকেই উপলব্ধি হচ্চে। ওই যে হীরালাল-মোহনলালের দোকানের ছাপ। পত্রখানি তাঁর উকিলের, না একেবারে আদালতের হে? ও খামখানা ত দেখচি সলোমন সাহেবের। বাবা, বিলিতি সুধার গন্ধ যেন কাগজ ফুড়ে বের হচ্চে। কি বলেন সাহেব? ডিক্রী-জারি করবেন, না এই রাজবপুখানি নিয়ে টানা-হেঁচড়া করবেন-জানাচ্চেন? আঃ–সেকালের ব্রাহ্মণ্য তেজ কিছু যদি বাকী থাকত ত এই ইহুদি ব্যাটাকে একেবারে ভষ্ম করে দিতাম। মদের দেনা আর শুধতে হ’তো না।
প্রফুল্ল। (ব্যাকুল হইয়া) কি বলচেন দাদা? থাক্, থাক, আর একসময় হবে। (ফিরিতে উদ্যত হইল।)
জীবানন্দ (সহাস্তে) আরে লজ্জা কি ভায়া, এরা সব আপনার লোক, জ্ঞাতগোষ্টি, এমন কি মণিমাণিক্যের এপিঠ-ওপিঠ বললেও অত্যুক্তি হয় না। তা ছাড়া তোমার দাদাটি যে কত্ত্বরী-মৃগ; সুগন্ধ আর কতকাল চেপে রাখবে ভাই? প্রফুল্ল, রাগ ক’রে না ভায়া, আপনার বলতে আর কাউকে বড় বাকী রাখিনি, কিন্তু এই চল্লিশটা বছরের অভ্যাস ছাড়তে পারব বলেও ভরসা নেই, তার চেয়ে বরঞ্চ নোট-টোট জাল করতে পারে এমন যদি কাউকে যোগাড় করে আনতে পারতে হে—
প্রফুল্ল। (অত্যন্ত বিরক্ত হইয়াও হাসিয়া ফেলিল) দেখুন, সবাই আপনার কথা বুঝবে না। সত্য ভেবে যদি কেউ—
জীবানন্দ (গম্ভীর হইয়া) সন্ধান করে নিয়ে আসেন? তা হলে ত বেঁচে যাই প্রফুল্ল। রায়মশায়, আপনি ত শুনি অতি বিচক্ষণ ব্যক্তি, আপনার জানাশুনা কি এমন কেউ—
জনার্দ্দন। (ম্লান-মুখে উঠিয়া) বেলা হ’লো যদি অনুমতি করেন ত—
জীবনন্দ। বসুন, বসুন, নইলে প্রফুল্লর জাঁক বেড়ে যাবে। তা ছাড়া ভৈরবীর কথাটাও শেষ হয়ে যাক। কিন্তু আমি যাও বললেই কি সে যাবে?
জনার্দ্দন। সে ভার আমাদের।
জীবানন্দ। কিন্তু আর কাউকে ত বাহাল করা চাই। ও ত খালি থাকতে পারে না।
অনেকে। সে ভারও আমাদের।
জীবানন্দ। যাক বাঁচা গেল, তবে সে যাবেই। এতগুলো মানুষের নিশ্বাসের ভার একা ভৈরবী কেন, স্বয়ং মা-চণ্ডীও সামলাতে পারেন না। আপনাদের লাভ-