পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রহ

 ভৃত্য। মা, কালকের মত আজও ঝড়-জল হতে পারে—মেঘ উঠেছে।

 হৈম। আজ তা হলে উঠি। মেঘের জন্যে নয় দিদি, তোমার কাছ থেকে উঠতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু কাল সকালেই যাত্রা করতে হবে—আজ যেন আর কাজের অন্ত নেই। এঁকে নিয়ে পালিয়ে এসেছি, লুকিয়ে বাড়ি ঢুকতে হবে—বাবা না দেখতে পান। এতক্ষণে খোকা হয়ত ঘুম ভেঙে উঠে বসে কঁদছে, তাকে আবার দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়াতে হবে, এর খাওয়া-দাওয়া আমি ছাড়া আর কেউ বোকে না, আড়ালে থেকে সে ব্যবস্থা করতে হবে—তার পরে রেলগাড়িতে দীর্ঘ পথের সমস্ত আয়োজনই আমাকে নিজের হাতে করে নিতে হবে। কারও উপর নির্ভর করবার জো নেই। স্বামী, পুত্র, চাকর-বাকর—তার কত ঝঞ্চাট, কত ভার—আমার নিশ্বাস ফেলবারও সময় নেই দিদি।

 ষোড়শী। এতে ত তোমার কষ্ট হয় বোন?

 হৈম। (হাসিমুখে) তা হয়। তবু এই আশীর্বাদ আমাকে কর তুমি, যেন এই কষ্ট মাথায় নিয়েই একদিন যেতে পারি। আর ফিরে যদি আবার জন্ম নিতেই হয়, যেন এমনি কষ্টই বিধাতা আমার অদৃষ্টে লিখে দেন। সেদিনেও যেন এমনি নিশ্বাস ফেলবারও অবকাশ না পাই॥

 ষোড়শী। তোমার কথাটা আমি বুঝেছি হৈম। এ যেন তোমার আনন্দের মধুচক্র। আর যতই বাড়ছে ততই এর অন্ধ্র- মধুতে ভরে ভরে উঠছে। তাই হোক, এই আশীৰ্বাদই তোমাকে আজ করি।

 হৈম। (সহসা পদধূলি লইয়া) তাই কর দিদি, মেয়েমানুষের জীবনে এর বড় আশীৰ্বাদই কি আছে!

 নির্মল। আঃ, কি বকে যাচ্চো বল ত? আজ তোমার হ’লো কি?

 হৈম। কি যে হয়েছে তুমি তার জানবে কি?

 ঘোড়শী। জানার শক্তিই আছে না কি আপনাদের?

 নির্মল। আপনাদের অর্থাৎ পুরুষদের ত? না, এতবড় কঠিন তত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম করবার সাধ্য নেই আমাদের সে-কথা মানি, কিন্তু আপনিই বা এ সত্য জানলেন কি করে?

 হৈম। কেন? দেবীর ভৈরবী বলে? কিন্তু ভৈরবী কি নারী নয়? ওগো মশায়, এ তত্ত্ব আমাদের চেষ্টা করে শিখতে হয় না। আমাদের জন্মকালে বিধাতা স্বহস্তে তার দুই হাত পূর্ণ করে আমাদের বুকের মধ্যে ঢেলে দেন। সে সম্পদের কাছে ইন্দ্রাণী ঐশ্বর্য্যও কামনা করিনে এ কি সত্য নয় দিদি?

৪৪