পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রহ

 সাগর। তা সব ভালো। এই মঙ্গলবারেই মেয়েটার অভিষেক শেষ হবে। তোমারও ভাবনা নেই—কাশীবাসের বাবদে প্রার্থনা জানালে শখানেক টাকা পেতে পারবে।

 ষোড়শী। প্রার্থনা জানাতে হবে বোধ করি হুজুরের কাছে?

 সাগর। বোধ হয় তাই।

 ষোড়শী। আচ্ছা, জমি-জমা যাদের সমস্ত গেল, তাদের উপায় কি স্থির হ’লো?

 সাগর। ভয় নেই মা, চিরকাল ধরে যা হয়ে আসছে তার অন্যথা হবে না।

 ষোড়শী। আর তোদের?

 সাগর। আমাদের খুড়ো-ভাইপোর? (একটু হাসিয়া) সে ব্যবস্থাও রায়মশায় করেছেন, নিতান্ত চুপ করে বসেছিলেন না। পাকা লোক, দারোগা পুলিশ মুঠোর মধ্যে, কোশ-দশেকের মধ্যে একটা ডাকাতি হতে যা দেরি।

 ষোড়শী। (ভয় পাইয়া) হরে, একি তোরা সত্যি বলে মনে করিস?

 সাগর। মনে করি? এ ত চোখের উপর স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি মা। আমাদের জেলের বাইরে রাখতে পারে এ সাধ্য আর কারও নেই। (একটু থামিয়া) তা বলে যাদের জেল হবে না তাদের দুর্ভাগ্য কিছু কম নয় মা।

 ষোড়শী। কেন রে?

 সাগর। তাদের অবস্থা আমাদের চেয়েও মন্দ। জেলের মধ্যে খেতে দেয়, যা হোক আমরা দু’টো খেতে পাব, কিন্তু এরা তাও পাবে না। রায়মশায়ের কাছে ধার করে জমিদারের সেলামী জুগিয়েছে, সেই খতগুলো সব ডিক্রী হতে যা বিলম্ব, তাঁর পরে তার নিজ জোতে জন খেটে দু’মুঠো জোটে ভালো, না হয়—

 ষোড়শী। না হয় কি?

 সাগর। না হয় আসামের চা-বাগান আছেই। কেন মা, তোমারই কি মনে পড়ে না ওই বেলডাঙাটায় আগে আমাদের কত ঘর ভূমিজ বাউরির বসতি ছিল?

 ষোড়শী। (ঘাড় নাড়িয়া) পড়ে।

 সাগর। আজ তারা কোথায়? কতক গেল কয়লা খুড়তে, কতক গেল চালান হয়ে চা-বাগানে। কিন্তু আমি দেখেচি ছেলেবেলায় তাদের জমি-জমা, হাল-বলদ। দু’মুঠো ধানের সংস্থান তাদের সবাইয়ের ছিল। আজ তাদের অর্ধেক এককড়ি নন্দীর, অর্ধেক রায়মশায়ের।

 ষোড়শী। (স্তব্ধ থাকিয়া) আচ্ছা সাগর, এ-সব তুই শুনলি কার মুখে?

 সাগর। স্বয়ং হুজুরের মুখেই।

৪৬