পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষোড়শী বিদায় করে আমাকে তক্তে বসাও মা, জনাৰ্দ্দন আর এককড়ি, এই দুই তাল বেতালকে সঙ্গে নিয়ে আমি এমনি সেবা তোমার শুরু করে দেব যে, একদিনের পূজোর চোটে তোমার মাটির মূৰ্ত্তি আহ্বাদে একেবারে পাথর হয়ে যাবে। কিন্তু ভক্তি-তত্বের এ-সব বড় বড় কথা না হয় পরে ভাবা যাবে, কিন্তু এখন ক্ষিদের জালায় যে আর দাড়াতে পারিনে । বাস্তবিক নেই কিছু অলকা ? ষোড়শী । কিন্তু বাড়ি গিয়ে ত অনায়াসে খেতে পারবেন। জীবানন্দ। অর্থাৎ, আমার বাড়ির খবর আমার চেয়ে তুমি বেশী জানো । ( এই বলিয়া সে একটুখানি হাসিল । ) ষোড়শী। আপনি সারাদিন খাননি, আর বাড়িতে আপনার খাবার ব্যবস্থা নেই। এ কি কখনো হতে পারে ? - জীবানন্দ । না পারবে কেন ? আমি খাইনি বলে আর একজন উপোস করে থালা সাজিয়ে পথ চেয়ে থাকবে এ ব্যবস্থা ত করে রাখিনি । আজ খামোকা রাগ করলে চলবে কেন অলকা ? ( বলিয়া সে তেমনি মৃদু হাসিল ) আমার যে শান্তিময় জীবনযাত্রা সেদিন চোখে দেখে এসেচ সে বোধ হয় ভুলে গেছ । আজ তা হলে আসি ? ষোড়শী। (ব্যাকুল-কণ্ঠে) দেবীর সামান্য একটু প্রসাদ আছে, কিন্তু সে কি আপনি খেতে পারবেন ? জীবানন্দ। খুব পারব। কিন্তু সামান্য একটু প্রসাদ। কিন্তু সে ত নিশ্চয় তোমার নিজের জন্য আনা অলকা ? ষোড়শী। নইলে কি আপনার জন্যে রেখেচি এই আপনি মনে করেন ? জীবানন্দ । ( হাসিমুখে ) না, তা করিনে। কিন্তু ভাবচি, তোমাকে ত বঞ্চিত করা হবে । ষোড়শী। সে ভাবনার প্রয়োজন নেই। আমাকে বঞ্চিত করায় আপনার নূতন অপরাধ কিছু হবে না । জীবানন্দ । না, অপরাধ আর আমার হয় না। একেবারে তার নাগালের বাইরে চলে গেছি! কিন্তু হঠাৎ একটা অদ্ভুত খেয়াল মনে উঠেচে অলকা, যদি না হাসো ত তোমাকে বলি । - ষোড়শী। বলুন। জীবানন্দ । কি জানো, মনে হয়, হয়ত আজও বঁাচতে পারি, হয়ত আজও মানুষের মত—কিন্তু এমন কেউ নেই যে আমার—কিন্তু তুমিই পারো শুধু এই পাপিষ্ঠের তার নিতে—নেবে অলকা ? & 3