পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষোড়শী জীবানন্দ । আমি সত্যবাদী নই ; কিন্তু আজকের কথা আমার তুমি বিশ্বাস কর । তোমার মাকে আমি জানতাম, তার মেয়েকে স্ত্রী বলে গ্রহণ করবার মতলব আমার ছিল না—ছিল কেবল তার টাকাটাই লক্ষ্য । কিন্তু সে-রাত্রে হাতে হাতে তোমাকে যখন পেলাম, তখন না বলে ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছেও আয় হ’লো না । ষোড়শী। তবে কি ইচ্ছে হ’লো ? জীবানন্দ । থাক, সে তুমি আর শুনতে চেয়ে না। হয়ত শেষ পর্য্যন্ত শুনলে আপনিই বুঝবে, এবং সে বোঝায় ক্ষতি বই লাভ আমার হবে না। কিন্তু এরা তোমাকে যা বুঝিয়েছিল তা তাই নয়, আমি তোমাকে ফেলে পালাইনি। ষোড়শী । আপনার না পালানোর ইতিবৃত্ত এখন ব্যক্ত করুন। জীবানন্দ । আমি নিৰ্ব্বোধ নই, যদি ব্যক্তই করি, তার সমস্ত ফলাফল জেনেই করব । তোমার মায়ের এতবড় ভয়ানক প্রস্তাবেও কেন রাজি হয়েছিলাম জানো ? একজন স্ত্রীলোকের হার আমি চুরি করি ; ভেবেছিলাম টাকা দিয়ে তাকে শান্ত করব। সে শান্ত হ’লো, কিন্তু পুলিশের ওয়ারেন্ট শাস্ত হ’লো না। ছ'মাস জেলে গেলাম—সেই যে শেষ রাত্রে বের হয়েছিলাম, আর ফেরবার অবকাশ হ’লো না । ষোড়শী । ( রুদ্ধ-নিশ্বাসে ) তার পরে ? জীবানন্দ (মৃদু হাসিয়া ) তার পরেও মন্দ নয়। জীবানন্দবাবুর নামে আরও একটা ওয়ারেন্ট ছিল। মাস-কয়েক পূৰ্ব্বে রেলগাড়িতে একজন বন্ধু সহযাত্রীর ব্যাগ নিয়ে তিনি অন্তহিত হন। অতএব আরও দেড় বৎসর । একুনে বছর-দুই নিরুদ্দেশের পর বীজগায়ের ভাবী জমিদারবাবু যখন রঙ্গমঞ্চে পুনঃপ্রবেশ করলেন, তখন কোথায় ব৷ অলকা, আর কোথায় বা তার মা ! (দু’জনেই ক্ষণিক নিস্তন্ধ হইয়া রহিল ) আর একবার সভায় যেতে হবে । অলকা, আসি তা হলে । ষোড়শী । সভায় আপনার অনেক কাজ, না গেলেই নয়। কিন্তু কিছু না খেয়েও ত যেতে পারবেন না । জীবানন্দ । পারব না ? তা হলে আনো । কিন্তু মস্ত বদ অভ্যেস আমার, খেয়ে অার নড়তে পারিনে । ষোড়শী । না পারেন, এখানেই বিশ্রাম করবেন। জীবানন্দ । বিশ্রাম করব ! যদি ঘুমিয়ে পড়ি অলকা ? ষোড়শী । ( হাসিয়া ) সে সস্তাবনা ত রইলই । কিন্তু পালাবেন না যেন ? আমি খাবার নিয়ে আসি । - - - [ প্রস্থান ] \