পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ রছিলেন, নিদারুণ অভিমানে তাহার দুই চক্ষু বাহিয়া ঝরঝর করিয়া আশ্র ঝরিয়া পড়িতে লাগিল। তাহার গর্ভের সন্তানকে স্বামী বিশ্বাস করিতে পারিলেন না, মন্দ বলিয়া মৃত্যুকালে পুত্রের ন্যায্য অধিকার হইতে তাহাকে বঞ্চিত করিতে চাহিলেন, এ দুঃখ তাহার বক্ষে যে কি শূল বিদ্ধ করিল, তাহা তিনি একবার চাহিয়াও দেখিলেন না । সে মন্দ হোক, যা হোক, তিনি ত মা ? সে ত তাহারই সস্তান ? সেই দুর্ভাগ্য সন্তানের অন্ধকার ভবিষ্যৎ চোখের সম্মুখে মুস্পষ্ট দেখিয়া তাহার মাতৃহৃদয় এইবার মাথা কুটিয়া কুটিয়া কাদিতে লাগিল। কিন্তু পিছাইয়া পরিত্রাণ পাইবার কোন উপায় কোনদিকে চাহিয়া চোখে পড়িল না। মুম্ষু স্বামীর তৃপ্তির জন্য সস্তানের সৰ্ব্বনাশের পথ যখন নিজেই অঙ্গলি-সঙ্কেতে দেখাইয়া দিয়াছেন, তখন কে র্তাহার মুখ চাহিয়া সে-পথ যাচিয়া রুদ্ধ করিয়া দিতে আসিবে ? সেইদিনই অপরাহ্নকালে উকিল ডাকিয়া রীতিমত উইল লেখা হইয়া গেল । বৈকুণ্ঠ স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি র্তাহার বড়ছেলেকে লিখিয়া দিলেন। সাক্ষী হইয়া নাম লিখিতে গিয়া ভবানীর হাত কঁাপিয়া গেল। মাতৃস্নেহ কোথায় অলক্ষ্যে বসিয়া বারংবার তাহার হাত চাপিয়া ধরিতে লাগিল, কিন্তু নিবৃত্ত করিতে পারিল না। স্বামীর পা দুইখানি অন্তরের মধ্যে দৃঢ়-স্থাপিত করিয়া তিনি আঁকা-বাক অক্ষরে নিজের নাম সই করিয়া দিলেন । বিনোদ কোন কথাই জানিল না । সে তখন কলিকাতার এক অপবিত্র পল্লীতে, ততোধিক অপবিত্র সংসর্গে মদ খাইয়া মাতাল হইয়া রহিল। বাট হইতে যে ছুইজন কৰ্ম্মচারী তাহাকে লইয়া যাইতে আসিয়াছিল, তাহারা দুইদিন পর্য্যস্ত র্তাহার বাসায় বৃথা অপেক্ষা করিয়া ফিরিয়া আসিল । কেহই এ সংবাদ বৈকুণ্ঠকে দিতে সাহস করিল না । তিমিও এ-সম্বন্ধে কাহাকেও কোন কথা প্রশ্ন করিলেন না । কিন্তু কিছুই তাহার কাছে চাপা রহিল না । - আরও দিন-দুই টালে-বেটালে কাটিয়া আজ সকাল হইতেই তাহার শ্বাসকষ্ট প্রকাশ পাইয়াছিল । সমস্তদিন আচ্ছন্নের মত পড়িয়া থাকিয়া সন্ধ্যার প্রাঙ্কালে তিনি চোখ মেলিলেন । ভবানী শিয়রের কাছে বসিয়াছিলেন, গোকুল পদতলে বসিয়া কাদিতেছিল। বৈকুণ্ঠ ইঞ্জিতে তাহাকে আরও কাছে আসিতে বলিয়া অত্যন্ত ক্ষীণকণ্ঠে কহিলেন, বিনোদ বুঝি খবর পেলে না, গোকুল ? নইলে সে নিশ্চয় আসত। বলিতে বলিতেই তাহার চোখের কোণ বহিয়া একফোটা জল গড়াইয়া পড়িল । এই কয়দিনের মধ্যে তিনি বিনোদের নাম একটিবারও মুখে আনেন নাই। সহসা শেষ সময়ে ছেলের নাম স্বামীর মুখে শুনিয়া ধিক্কারে বেদনায় ভবানীর বুক ফাটিয়া গেল, কিন্তু তিনি তেমনি নীরবে অধোমুখে বসিয়া রছিলেন। • ? . . . . --. S X •