পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 বিনোদ বিষয় পায় নাই, কথাটা প্রকাশ পাইবামাত্র পাড়ার দুই-চারিজন গাটের পয়সা খরচ করিয়া কলকাতায় খোঁজাখুজি শুরু করিয়া দিল। তখন আর কোন কথাই চাপা রহিল না। তাহারা ফিরিয়া আলিয়া বিনোদের ব্যাপার নাম ধাম পরিচয় দিয়া একেবারে প্রকাশ করিয়া দিল । কিন্তু আশ্চৰ্য্য এই যে, অকৃতজ্ঞ গোকুল তাহদের এই উপকার স্বীকার করিল না। সে রাগের মাথায় একেবারে ফস্ করিয়া বলিয়া বসিল, শালারা সব মিথ্যেবাদী। কেবল হিংসে করে এই সব রটাচ্চে । - অতিবৃদ্ধ বাড়ুষ্যেমশাই লাঠি ঠক্ ঠক্‌ করিয়া আসিয়াই একেবারে কঁাদিতে শুরু করিয়া দিলেন। অনেক কষ্টে কান্না থামিলে বলিলেন, গোকুল রে, আমার হারাণ তিনদিন তিনরাত্রি খায়নি, শোয়নি, কেবল কলকাতার গলিতে গলিতে ঘুরে বেড়িয়েচে । পচিশ ত্রিশ টাকা খরচ করে তবে সন্ধান পেয়েচে, কোথায় সে ছোড়া থাকে। এ-ঠিকানা বার করা আর কি কারো সাধ্য ছিল ! গোকুল তিক্ত-কণ্ঠে জবাব দিল, আমি ত কাউকে টাকা খরচ করতে সাধিনি মশাই! বঁড়িয্যে অবাক্ হইয়া কহিলেন, সে কি গোকুল, আমরা যে তোমাদের আপনার লোক ! আর সবাই চুপ করে থাকতে পারে, কিন্তু আমরা পারি কৈ ? আচ্ছ, যান যান, আপনার কাজে যান। বলিয়া গোকুল নিতান্ত অভদ্রভাবে অন্যত্র চলিয়া গেল। একদিন দুইদিন করিয়া কাটিতে লাগিল, অথচ বিনোদ আসে না। শাস্তপ্রকৃতি গোকুল একেবারে উগ্র হইয়া উঠিল। ভবানীকে দেখিলে ষেন চেনা যায় না, এই কয়দিনে তাহার এমন পরিবর্তন ঘটিয়াছে। নীরবে নতমুখে আগামী শ্রাদ্ধের কাজ-কৰ্ম্ম করেন—ছেলের নাম যুখেও আনেন না । এই একটা বৎসর বিনোদ যখন তখন নানা ছলে গোকুলের কাছে টাকা আদায় করিত। তাহার স্ত্রী মনোরম ব্যাপারটা পূৰ্ব্বেই অনুমান করিয়া স্বামীকে বারংবার সতর্ক করা সত্ত্বেও সে কান দেয় নাই। এই উল্লেখ আজ সকালে করিবামাত্রই গোকুল আগুন হইয়া কহিল, বিনোদ যখন কারুর বাপের বাড়ির টাকা নষ্ট করবে, তখন যেন তারা কথা কয় ।—বলিয়া দ্রুতপদে তাহার বিমাতার ঘরের স্বমুখে আসিয়া

  • > * ३ .