পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ না, একদিন দুইদিন করিয়া দশ-বারোদিন কাটিয়া গেল। এদিকে ছেলেটা হইয়াছে সন্তোষের বন্ধু, বয়সে তিন-চার বছরের ছোট, সামাজিক ও সাংসারিক ব্যবধানও অত্যন্ত বৃহৎ, কিন্তু অন্য সঙ্গীর অভাবে সে মিশিয়া গেছে ইহারই সঙ্গে । ইহায়ই সঙ্গে থাকে বাটীর ভিতরে, ঘুরিয়া বেড়ায় বাগানে বাগানে নদীর ধারে—কাচা আম কুড়াইয়া, পার্থীর বাসা খুজিয়া। খায় অধিকাংশ সময়ে সন্তোষের মাসীর কাছে, ডাকে তাহারি দেখাদেখি মাসীমা বলিয়া । বাহিরে টাকা-কড়ি হিসাব-পত্র লইয়া বিজয় বিব্রত, সকল সময়ে ছেলের খোজ করিতে পারে না, যখন পারে তখন তাহার দেখা মিলে না। হঠাৎ কোনদিন হয়ত বকাঝকা করে, রাগ করিয়া কাছে বসাইয়া রাখে, কিন্তু ছাড়া পাইলেই ছেলেটা দৌড় মারে মাসীমার রান্নাঘরে। সন্তোষের পাশে বসিয়া খায় দুপুরবেলা ভাত, বিকালে তাহারি সঙ্গে ভাগাভাগি করিয়া লয় রুটি ও নারিকেল-নাড়ু। সেদিন বিকালে লোকজন তখনো কেহ আসিয়া পৌঁছায় নাই, বিজয় চা খাইয়া চুরুট ধরাইয়া ভাবিল নদীর ধারটা খানিক ঘুরিয়া আসে। হঠাৎ মনে পড়িল সমস্তদিন ছেলেটার দেখা নাই । পুরাতন চাকরট দাড়াইয়াছিল, জিজ্ঞাসা করিল, কুমার কোথা রে ? সে ইঙ্গিতে দেখাইয়া কহিল, বাড়ির মধ্যে । ভাত খেয়েছিল ? ন! | জোর করে ধরে এনে খাওয়াসনে কেন ? এখানে খেতে চায় না, রাগ করে ছড়িয়ে ফেলে দেয় । কাল থেকে আমার সঙ্গে শুর খাবার জায়গা করে দিস, বলিয়া কি ভাবিয়া আর সে বেড়াইতে গেল না, সোজা ভিতরে গিয়া প্রবেশ করিল । সুদীর্ঘ প্রাঙ্গণের অপর প্রান্ত হইতে পুত্রের কণ্ঠস্বর কানে গেল—মাসীমা, আর একখানা রুটি আর দুটো নারকেল-নাডু—শীগগির ! যাহাকে আদেশ করা হইল সে কহিল, নেবে অায় না বাবা, তোদের মত আমি কি গাছে উঠতে পারি ? জবাব হইল—পারবে মালীম, কিছু শক্ত নয়। এই মোটা ভালটায় পা দিয়ে ওই ছোট ডালাটা ধরে এক টান দিলেই উঠে পড়বে। বিজয় কাছে আসিয়া দাড়াইল । রান্নাঘরের সম্মুখে একটা বড় আম গছ, তাহার ছুদিবের দুই মোটা ডালে বসিয়া কুমার ও বন্ধু সন্তোষ । পা ঝুলাইয়া গুড়িতে ঠেস ›ፃ8