পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত্রহীন । সে হবে না ঠাকুরপো! সব কথা আমার বুঝবে না, বোঝবার প্রয়োজনও নেই— তুমি সাধু হও, না হও, সেজন্যও আমি ভাবি না ; কিন্তু অপরাধের ভারে যখন আমার মাথা হয়ে পড়বে, তখন তোমার উপীনদাদার ঘাড়েও উচু করে চলবার মত মাথা কিছুতেই রাখব না—এ তুমি নিশ্চয়ই জেনে । বলিয়াই আবার সে তাহার শয্য-রচনায় প্রবৃত্ত হইল এবং অদূরে গদ্বি-জাট বেঞ্চের উপর দিবাকর আড়ষ্ট হইয়া মাথা নীচু করিয়া বসিয়া রহিল। রাত্রে উভয়ে পাশাপাশি শয়ন করিল। অদৃষ্টের ফেরে সর্বত্র দান করিয়া হরিশ্চন্দ্র যেমন করিয়া চণ্ডালের হাতে আপনাকে সমর্পণ করিয়াছিলেন, তেমনি ঘূণায় দিবাকর কিরণময়ীর শয্যাপ্রাস্তে আত্মসমর্পণ করিল। কিন্তু এ বিতৃষ্ণ কিরণময়ীর অগোচর রহিল না। সমস্ত রাত্রি ধরিয়া তাহার তন্দ্রাচ্ছন্ন দুই কানের মধ্যে কোথাকার অফুট রোদন প্রবাহের মত আসিয়া পৌঁছিতে লাগিল এবং তাহারই মাঝে মাঝে কাহাদের কুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস রহিয়া রহিয়া গৰ্জিয়া উঠিতে লাগিল। ভোরের দিকে একটা দোলা খাইয়া সে একেবারে সজাগ হইয়া উঠিয়াই বুঝিল, বাহিরে প্রবলবেগে বাতাস বহিতেছে এবং জাহাজ দুলিতে শুরু করিয়াছে । চোখ চাহিয়া দেখিল, তাহার বক্ষের উপর কিরণময়ীর কোমল হস্ত নিদ্রিত কাল-সপের মত পড়িয়া আছে। পাছে সজাগ হইয়া উঠিয়াই দংশন করে, এই আশঙ্কায় সে যেন উঠিতে সাহস করিল না, আবার চোখ বুজিয়া পড়িয়া রহিল। বাতাস এবং দোলনের বেগ ক্রমেই বন্ধিত হইতে লাগিল এবং কিরণময়ীর ঘুম ভাঙ্গিয়া গেল। দিবাকরের বক্ষস্থিত শিথিল হস্ত ঈষৎ চাপিয়া ধরিয়া আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করিল, বাহিরে ও কি—ঝড় নাকি ? দিবাকর বলিল, ই । তবে উপায় ? দিবাকর কথা কহিল না । কিরণময়ী বলিল, জাহাঙ্গ যেন ডুবে যায়, এই প্রার্থনাই বোধ করি ভগবানের কাছে জানাচ্চ—না ঠাকুরপো ? দিবাকর বলিল, না । ছোট একটুখানি না”—তুমি মানুষ, না পাথরের, ঠাকুরপো ? বলিয়াই সে স্বদ্যু বলের সহিত দিবাকরকে বক্ষের কাছে টানিয়া লইয়া বলিল, জাহাজ যদি ভোবে, আমরা যেন এমনি করেই মরি। তীরে ভেসে যাব, লোকে দেখবে, ছাপার কাগজে উঠবে, তোমার উপীনদাদ পড়বে—সে কেমন হবে ঠাকুরপো । 急碰》