পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

जउँौ নিৰ্ম্মলা সহাস্তে কহিল, বাড়ানো কথা। কিন্তু এ আবার উনি কবে বললেন ? হরিশ তখনও কাছে দাড়াইয়াছিল, সে একেবারে বিবর্ণ হইয়া উঠিল। লাবণ্য কহিল, এবার কলকাতায় । খেতে বসে কেবল আপনারই কথা । ওঁর বন্ধু কুশলবাবুর বাড়ি থেকে আমাদের বাড়ি খুব কাছে কি না । ছাতের ওপর থেকে চেচিয়ে ডাকলে শোনা যায় । নিৰ্ম্মলা বলিল, খুব স্থবিধে ত ! লাবণ্য হাসিয়া বলিল, কিন্তু তাতেই শুধু হয়নি, ছেলেকে পাঠিয়ে রীতিমত ধরে আনতে হ’তে । বটে ! লাবণ্য বলিল, আবার জাতের গোড়ামিও কম নেই, ব্রাহ্মদের ছোওয়া থান না —আমার পিসীমার হাতে পর্য্যন্ত না । সমস্তই আমাকে নিজে রোধে নিজে পরিবেশন করতে হতো। এই বলিয়া সে হাসিমুখে সকৌতুকে হরিশের প্রতি চাহিয়া বলিল, আচ্ছা, এর মধ্যে আপনার কি লজিক আছে বলুন ত? আমি কি ব্রাহ্ম-সমাজ ছাড়া ? হরিশের সৰ্ব্বাঙ্গ ঝিম্ ঝিম্ করিতে লাগিল, তাহার মিথ্যাবদিতা প্রমাণিত হওয়ায় তাহার মনে হইল, এতদিনে মা বসুমতী দয়া করিয়া বোধ হয় তাহাকে জঠরে টানিয়া লইতেছেন। কিন্তু পরমাশ্চৰ্য্য এই যে, নিৰ্ম্মলা আজ ভয়ঙ্কর উন্মাদ কাগু কিছু একটা না করিয়া স্থির হইয়া রহিল। সংশয়ের বস্তু অবিসংবাদী সত্যরূপে দেখা দিয়া বোধ হয় তাহাকেও হতচেতন করিয়া ফেলিয়াছিল । হরিশ বাহিরে আসিয়া স্তন্ধ পাংশুমুখে বসিয়া রহিল। এই ভীষণ সম্ভাবনার কথা স্মরণ করিয়া লাবণ্যকে পূৰ্ব্বাহ্নে সতর্ক করিবার কথা বহুবার তাহার মনে इहेब्रट्झ, কিন্তু আত্ম-অবমাননাকর ও একান্ত মৰ্য্যদাহীন লুকোচুরির প্রস্তাব সে কোনমতেই এই শিক্ষিত ও ভদ্রমহিলাটির সম্মুখে উচ্চারণ করিতে পারে নাই। লাবণ্য চলিয়া গেলে নিৰ্ম্মলা ঝড়ের বেগে ঘরে ঢুকিয়া বলিল, ছিঃ-তুমি এমন মিথ্যাবাদী ! এত মিথ্যে কথা বল ! হরিশ চোখ রাঙাইয়া লাফাইয়া উঠিল—বেশ করি বলি। আমার খুশি । নিৰ্ম্মলা ক্ষণকাল স্বামীর মুখের প্রতি নিঃশৰে চাহিয়া থাকিয়া কাদিয়া ফেলিল । কহিল, বল, যত ইচ্ছে মিথ্যে বল, যত খুশি আমাকে ঠকাও। কিন্তু ধর্শ্ব যদি থাকে, যদি সতী মায়ের মেয়ে হই, যদি কায়-মনে সতী হই—আমার জন্তে তোমাকে একদিন কাতে হবে, হবে, হবে! বলিয়া সে যেমনি আসিয়াছিল তেমনি দ্রুতবেগে বাহির হইয়া গেল । ३७४