পাতা:নারীর মূল্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৭
নারীর মূল্য

 তাহাদের মনের ভাব এই যে, পরের দোষগুলা প্রচার করিতে পারিলেই নিজেদের গুণগুলা মাথা নাড়া দিয়া উঠিবে। Divorce জিনিসটা যে বাঞ্ছনীয় নয়, সে-কথা তাহারাও বোঝে, কিন্তু মার খাইয়া তাহারা চুপ করিয়া থাকিতে পারে না—মারামারি করে। মারামারি জিনিসটা নিঃশব্দে হইবার বস্তু নয়, তাই সে-কথা বাহিরের লোকে শোনে, এবং তাই শত্রু-পক্ষ দাঁত বাহির করিয়া হাসিয়া আকুল হইয়া উঠিবার অবকাশ পায়। কিন্তু যদি জিজ্ঞাসা করা যায়, যে-কারণে ও-অঞ্চলে এ মকদ্দমা রুজু হয়, সে কারণ কি হিন্দুর ঘরে ঘটে না? আমার বিশ্বাস, যে অতিবড় নির্লজ্জ, সেও বোধ করি, না বলিবে না। যদি তাই হয়, তবে আহ্লাদ করিবার হেতু কোন্‌খানে থাকে? মকদ্দমাই কি আসল বস্তু, কারণটা কিছু নয়? ও-দেশেও একসময় divorce ছিল না, কিন্তু মধ্যযুগের অকথ্য হীনতার মধ্যে পড়িয়াই একসময় তাহাদের চৈতনা হইয়াছিল। Church’s irrational rigidity as regards divorce tended to foster disorder and shame. Sexual disorder increased. Woman became cheaper in the esteem of men and the narrowing of her interest to domestic work, the desire to please men proceeded apace. শাস্ত্রের এই গোঁড়ামি নারী জাতিকে যে কত দুঃখে, কত নীচে নামাইয়া আনিয়াছিল, আচার্য K. Pearson তাঁহার Ethic of Free Thought গ্রন্থে অনেকরকমে তাহার আলোচনা করিয়া দেখাইয়া গিয়াছেন,—নারী-মাত্রকেই একবার তাহা পড়িতে অনুরোধ করি।

 কিন্তু তাই বলিয়া আমাকে যেন এমন ভুল না বুঝা হয় যে, আমি divorce বস্তুটাকেই ভাল বলিতেছি। মারামারি জিনিসটাও ভাল জিনিস নয়; সমাজের মধ্যে ওটা ঘটিতে থাকে, এ কামনা কেহ করে না। কিন্তু স্ত্রী-ত্যাগ বলিয়া একটা ব্যাপার যখন আমাদের মধ্যে আছে, তখন উভয় পক্ষেই ও-জিনিষটা কেন থাকা উচিত নয়, তাহা বলিতে পারি না।