পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ দেখিল তখন, বলিয়া গয়া একখানা ছেড়া গামছা টানিয়া লইয়া কোমরে জড়াইয়া প্রস্থানের উদ্যোগ করিতেই গঙ্গামণি উত্তেজিত হইয়া বলিলেন, আজ ষষ্ঠীর দিনে পয়েন্ত্র ঘরে চেয়ে খেলে তোর কি দুৰ্গতি করি, তা দেখিস হতভাগা ! গয়া জবাব দিল না। রান্নাঘরে ঢুকিয় এক-খামচ তেল লইয়া মাথায় ঘষিতে ঘষিতে বাহির হইয়া যায় দেখিয়া জ্যাঠাইমা উঠানে নামিয়া আসিয়া ভয় দেখাইয়া কহিলেন, দস্তি কোথাকার! ঠাকুর-দেবতার সঙ্গে গোয়ারতুমি ! ডুব দিয়ে ফিরে না এলে ভাল হবে না বলে দিচ্চি । আজ আমি রেগে রয়েচি । কিন্তু গয়ারাম ভৱ পাইবার ছেলে নয়। সে শুধু দাত বাহির করিয়া জ্যাঠাইমাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ প্রদর্শন করিয়া চুটিয়া চুলিয়া গেল। গঙ্গামণি তাহার পিছনে পিছনে রাস্তা পর্য্যস্ত আসিয়া টেচাইতে লাগিলেন, আঞ্জ ষষ্ঠীর দিন কার ছেলে ভাত খায় যে, তুই ভাত খেতে চাল ? পাটালি-গুড়ের সন্দেশ দিয়ে, চাপা কলা দিয়ে, দুধ দই দিয়ে ফলার করা চলে না যে, তুই ষাবি পরের ঘরে চেয়ে খেতে ? কৈবর্তের ঘরে তুমি এমনি নবাব জন্মেচ ? গয়া কিছু দূরে ফিরিয়া দাড়াইয়া বলিল, তবে তুই দিলিনি কেন পোড়ারমুখি ? কেন বললি, নেই ? গঙ্গামণি গালে হাত দিয়া অবাক হইয়া বলিলেন, শোন কথা ছেলের । কখন আবার বললুম তোকে, কিছু নেই ? কোথায় চান, কোথায় কি, দশুির মত ঢুকেই বলে, দে ভাত ! ভাত কি আজ খেতে আছে যে দেব ! আমি বলি, সবই ত মজুত, ডুবট দিয়ে এলেই— গয়া বলিল, ফলার তোর পচুক । রোজ রোজ আবাগীরা ঝগড়া করে রান্নাঘরের শেকল টেনে দিয়ে পা ছড়িয়ে বসে থাকবে, আর রোজ আমি তিনপোর বেলায় ভাতে-ভাত খাব ? না আমি তোদের কারুর কাছে খেতে চাইনে, বলিয়া সে হন হন করিয়া চলিয়া যায় দেখিয়া গঙ্গামণি সেইখানে দাড়াইয়া কাদ-কাঙ্গ গলায় চেচাইতে লাগিলেন, আজ ষষ্ঠীর দিনে কারে কাছে চেয়ে খেয়ে অমঙ্গল করিসনে গয়া-লক্ষ্মী বাপ আমার— ন হয় চারটে পয়সা দেবো রে, শোন— - গয়ারাম ক্ৰক্ষেপও করিল না, দ্রুতবেগে প্রস্থান করিল । বলিতে বলিতে গেল, চাইনে আমি ফলায়, চাইনে আমি পয়সা । তোর ফলারে আমি—ইত্যাদি ইত্যাদি । সে দৃষ্টির অন্তরালে চলিয়া গেলে গঙ্গামণি বাড়ি ফিরিয়া রাগে, দুঃখে, অভিমানে নিজীবের মত দাওয়ার উপর বসিয়া পড়িলেন এবং গয়ার কুব্যবহারে মৰ্ম্মাহত হইয়া তাহার বিমাতার মাথা খাইতে লাগিলেন। ॐ 8रै