পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিলাসী তাহার জোড়া ছিল না। আর শুধু ছেলেরাই নয়। কত ছেলের বাপ কতবার যে গোপনে ছেলেকে দিয়া তাহার কাছে স্কুলের মাহিনী হারাইয়া গেছে, বই চুরি গেছে, ইত্যাদি বলিয়া টাকা আদায় করিয়া লইত, তাহ বলিতে পারি না। কিন্তু ঋণ স্বীকার করা ত দূরের কথা, ছেলে তাহার সহিত একটা কথা কহিয়াছে এ-কথাও কোন বাপ ভদ্র-সমাজে কবুল করিতে চাহিত না—গ্রামের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয়ের ছিল এমনি স্বনাম । অনেকদিন মৃত্যুঞ্জয়ের দেখা নাই। একদিন শোনা গেল, সে মর-মর। আর এক দিন শোনা গেল, মালপাড়ায় এক বুড় মাল তাহার চিকিৎসা করিয়া এবং তাহার মেয়ে বিলাসী সেবা করিয়া মৃত্যুঞ্জয়কে যমের মুখ হইতে এ-যাত্র ফিরাইয়া আনিয়াছে। অনেকদিন তাহার অনেক মিষ্টাল্পের সদ্ব্যয় করিয়াছি—মনটা কেমন করিতে লাগিল, একদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে লুকাইয় তাহাকে দেখিতে গেলাম। তাহার পোড়েবাড়িতে প্রাচীরের বালাই নাই। স্বচ্ছন্দে ভিতরে ঢুকিয়া দেখি, ঘরের দরজা খোলা, বেশ উজ্জল একটা প্রদীপ জলিতেছে, আর ঠিক স্বমুখেই তক্তাপোষের উপর পরিষ্কার ধপধপে বিছানায় মৃত্যুঞ্জয় শুইয়া আছে, তাহার কঙ্কালসার দেহের প্রতি চাহিলেই বুঝা যায়, বাস্তবিকই যমরাজ চেষ্টার ক্রটি কিছু করেন নাই, তবে যে শের পর্য্যস্ত স্ববিধ করিয়া উঠিতে পারেন নাই, সে কেবল ওই মেয়েটির জোরে । সে শিয়রে বসিয়া পাখার বাতাস করিতেছিল, অকস্মাং মাকুম দেখিয়া চমকিয়া উঠিয় দাড়াইল। এই সেই বুড়া সাপুড়ের মেয়ে বিলাসী । তাহার বয়স আঠারো কি আটাশ ঠাহর করিতে পারিলাম না। কিন্তু মুখের প্রতি চাহিবামাত্র টের পাইলাম, বয়স যাই হোক, খাটিয়া খাটিয়া আর রাত জাগিয়া জাগিয়া ইহার শরীরে আর কিছু নাই। ঠিক যেন ফুলদানীতে জল দিয়া ভিজাইয়া রাখা বাসি ফুলের মত। হাত দিয়া এতটুকু স্পর্শ করিলে, এতটুকু নাড়াচাড়া করিতে গেলেই ঝরিয়া পড়িবে। মৃত্যুঞ্জয় আমাকে চিনিতে পারিয়া বলিল, কে, তাড়া ? বলিলাম, হু । মৃত্যুঞ্জয় কহিল, ব’সো । মেয়েট ঘাড় হেঁট করিয়া দাড়াইয়া রহিল। মৃত্যুঞ্জয় দুই-চারিটা কথায় যাহা কহিল, তাহার মৰ্ম্ম এই যে, প্রায় দেড় মাস্ হইতে চলিল সে শয্যাগত। মধ্যে দশ-পনেরো দিন সে অজ্ঞান অচৈতন্য অবস্থায় পড়িয়াছিল, এই কয়েকদিন হইল সে লোক চিনিতে পারিতেছে এবং যদিচ এখনো সে বিছানা ছাড়িয়া উঠিতে পারে না, কিন্তু আর ভয় । *नांई. at 3 ‘. . "M-ow