পাতা:বিশ্বকোষ চতুর্দশ খণ্ড.djvu/৫১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত হয়, এই আশঙ্কায় তিনি কলিকাতা হইতে কাশীদাসী মহাভারত ও কুণ্ডিবাসী রামায়ণ জানাইয়া পাঠ করিতে থাকেন। ঘটনাক্রমে কতকগুলি কারণে র্তাহার মাম্রাজ পরিত্যাগ অনিবাৰ্য্য হইয়া উঠিল। তিনি বঙ্গদেশে প্রত্যাগমন করিতে বাধ্য হইলেন। তাহার ভাবী জীবনের পথও পরিষ্কার হইয়া আসিল । মাজ্ঞাজে তিন বৎসর বাসের পর তাহার মাতৃবিয়োগ এবং তাহার চারি বৎসর পরে তাহার পিতার পরলোকপ্রাপ্তি ঘটে। মধুসূদনের আত্মীয়গণ মধুসূদনকে পরলোকগত জানিয় তাহার পিতৃসম্পত্তি গ্রাস করিয়া বসিল। এই সংবাদ গেীরদাস বাবু অল্পক্লিষ্ট মধুসূদনকে জানাইলেন। এই সময় তিনি মান্দ্রাজের দৈনিক পত্রিক Spectatorএর সহকারী সম্পাদক ও প্রেসিডেন্সী কলেজের শিক্ষকরূপে নিযুক্ত ছিলেন। চিরাভ্যস্ত অপরিমিতব্যয়িত-দোষে তিনি তখন অর্থাভাবে ক্লেশ পাইতেছিলেন। তাহার পারিবারিক জীবন অশাস্তিময় হইয়া উঠিয়াছিল। গেীরদাস বাবুর আহবান বড়ই সময়োপযোগী হইল। তিনি ১৮৫৬ খৃষ্ঠাকে ৮বৎসর কাল প্রবাস-বাসের পর স্বদেশে প্রত্যাগত হইলেন । আটবৎসরব্যাপী প্রবাসের ফলে তাহার আকৃতিপ্রকৃতি অনেক পরিবর্তিত হইয়াছিল। তিনি পূৰ্ব্বাপেক্ষ স্থূলকায় হইয়াছিলেন। যুরোপীয় মহিলার পাণিগ্রহণ ও বিজাতীয় সংসর্গে বাসহেতু তাহার কণ্ঠস্বরও অন্তরূপ হইয়াছিল । তিনি আহারে, পরিচ্ছদে এবং আচার ব্যবহারে সম্পূর্ণরূপ বৈদেশিক হইয়া পড়িয়াছিলেন। কলিকাতায় আসিয়া তিনি একেবারে নিঃসহায় ও নিঃসম্বল হইয়া পড়িলেন। তাহার মাত্মীয় বন্ধুগণ সমাজ ও ধৰ্ম্মত্যাগীকে আশ্রয় দিলেন না। একমাত্র প্রিয় মুহৃদ গেীরদাস বাবু চেষ্টা করিয়া তাহাকে তাৎকালীন পুলিশ মজিষ্ট্রেট ৮ কিশোরীচঁাদ মিত্রের অধীনে কেরাণীগিরি কায্যে নিযুক্ত করিয়া দেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি তথাকার দ্বিভাষিক পদে উন্নীত হইয়াছিলেন । সংবাদপত্রে লিখিয়াও তাছার কিছু আয় হইত। বাঙ্গালায় আসিয়া তাহার বাঙ্গল ভাষা শিক্ষার বিশেষ মুযোগ ঘটিল। পূৰ্ব্বে বাঙ্গালাভাষী যেরূপ ছিল, এক্ষণে ঈশ্বরচন্দ্র বিস্তাসাগর, ও অক্ষয়কুমার প্রভৃতির প্রতিভাগুণে তাছার সঞ্চাঙ্গীণ উন্নতি সাধিত হইল। মধুসূদন এই সুযোগে মার্জিত বাঙ্গালী শিক্ষার অবসর লাভ করেন। ঈশ্বরগুপ্তের রঙ্গরসপূর্ণ মুখরোচক চাটনী জাস্বাদনের পৰু আমরা প্রকৃতপক্ষে মধুসূদনের মধুচক্রের আম্রাণ এ সময় [ ৫১৪ ~ l পাইয়াছি। ঈশ্বরচন্দ্র একযুগের শেষ, মধুসূদন অপর যুগের कप्रिभुं । কলিকাতায় সামান্ত আয় হইলেও, জ্ঞাতিগণের হস্ত হইতে আপনার পৈতৃক সম্পত্তির উদ্ধার এবং আদালভের কাৰ্য্য সুচারুরূপে সম্পাদন তাহার প্রধান কৰ্ত্তব্য মধ্যে পরিগণিত হইয়াছিল । এই সময়ে বঙ্গে তাহার অদৃষ্ট। কাশ পরিষ্কার করিবার জন্ত আর একটা ঘটনা সমুপস্থিত হয় । হোরেস হিমেন উইলসন সাহেবের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত “Sans-Soci’ নাট্যশালার অনুকরণে ঐ সময়ে কলিকাতার মান্তগণ্য ব্যক্তিমাত্রেরই গৃহে নাটকাভিনয় হইত। ১৮৫৭ খৃষ্টাম্বে মার্চ মাসে ছাতু বাবুর বাটতে শকুন্তলার অভিনয় দেখিয়া পাইকপাড়ার রাজা প্রতাপচন্দ্র ও ঈশ্বরচন্দ্র এবং যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর স্থায়িভাবে একটা নাট্যশালা স্থাপনে কৃতসঙ্কল্প হন। ঈশ্বরচন্দ্র স্বয়ং নাট্যশালা নিৰ্ম্মাণের ও আমুসঙ্গিক সমস্ত আয়োজনের ভারত্মহণ করেন । ৮ দ্বারকানাথ ঠাকুরের বেলগাছিয়ার যে উস্তান পাইকপাড়ার রাজার ক্রয় করিয়াছিলেন, তথায় ঐ নাট্যশালা স্থাপিত হইয়াছিল। রামনারায়ণ তর্করত্ন প্রণীত রত্নাবলী এই নাট্যশালায় অভিনীত হইতেছিল। রত্নাবলী, ইংরাজী অম্বুবাদ করা স্থির হইলে, গেীরদাস বাবুর প্রস্তাবে রাজার খ্যাতনামা কবি মধুস্থদনের হস্তে রত্নাবলীর অনুবাদের ভার অর্পণ করেন। এই সময় হইতে পাইকপাড়ার উভয় রাজভ্রাতা এবং মহারাজ যতীন্দ্রমোহনের সহিত র্তাহার ঘনিষ্ঠত হইল। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি বেলগাছিয়। নাট্যশালার অনুষ্ঠাতাদিগের প্রীতিভাজন হহলেন । তৎকৃত অমুবাদ সকলের মনোনীত হইলে রাজার মধুসূদনকে পাচ শত টাকা পুরস্কার দিয়াছিলেন। রত্নাবলীর অভিনয়-প্রশংসার সঙ্গে সঙ্গে অনুবাদকের নামও চারিদিকে রাষ্ট্র হইয়া পড়িল । বঙ্গের ছোটলাট ও তাহার সহধৰ্ম্মিণী হইতে হরকরা পত্রের সম্পাদক পৰ্য্যন্তও তাহার অমুবাদের প্রশংসা করিয়া গিয়াছেন। রত্নাবলীর ংরাজী অম্বুবাদ হইতে মধুসূদন তাহার জীবনের গন্তব্যপথ প্রাপ্ত হইলেন । একদিন রত্নাবলীর অভিনয়াভ্যাস-দৰ্শনকালে মধুসূদন ও গেীরদাস বাবুর মধ্যে নুতন নাটকের অাবস্তকতার কথা উখাপিত হয় । তাহাতে মধুসূদন বলিয়াছিলেন, “ভাল নাটক ! মাইকেল মধুসূদন দত্ত আচ্ছা আমি রচনা করিৰ ।” গোরদাস বাবু হাসিন্ধ মনোভাব গোপনপূর্বক বলিলেন, “আপত্তি কি ? ইচ্ছা হইলে চেষ্ট৷ করিতে পার। গেীরদাস বাবুর সহিত কথোপকথনের পর দিনই তিনি এসিস্থাটিক সোসাইটর পুস্তকালয় হইতে সে