পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 কথাটা গোরাকে হঠাৎ যেন নূতন করিয়া ঠেকিল; সে উৎসাহবেগে বিনয়ের পিঠে এক চাপড় মারিয়া কহিল, “ঠিক বলেছ ওইটে আমার দোষ- আমার মস্ত দোষ।”

 বিনয়। উঃ, ওর চেয়েও তোমার আর-একটা মস্ত দোষ আছে। অন্য লোকের শিরদাঁড়ার উপরে কতটা আঘাত সয় তার ওজনবোধ তোমার একেবারেই নেই।

 এমন সময়ে গোরার বড়ো বৈমাত্র ভাই মহিম তাহার পরিপুষ্ট শরীর লইয়া হাঁপাইতে হাঁপাইতে উপরে আসিয়া কহিলেন, “গোরা!”

 গোরা তাড়াতাড়ি চৌকি ছাডিয়া উঠিয়া দাঁড়াইয়া কহিল, “আজ্ঞে।”

 মহিম। দেখতে এলেম, বর্ষার জলধরপটল আমাদের ছাতের উপরে গর্জন করতে নেমেছে কি না। আজ ব্যাপারখানা কী। ইংরেজকে বুঝি এতক্ষণে ভারতসমুদ্রের অর্ধেকটা পথ পার করে দিয়েছ? ইংরেজের বিশেষ কোনো লোকসান দেখছি নে, কিন্তু নীচের ঘরে মাথা ধ’রে বড়োবউ পড়ে আছে, সিংহনাদে তারই যা অসুবিধে হচ্ছে।

 এই বলিয়া মহিম নীচে চলিয়া গেলেন।

 গোরা লজ্জা পাইয়া দাঁড়াইয়া রহিল— লজ্জার সঙ্গে ভিতরে একটু রাগও জ্বলিতে লাগিল, তাহা নিজের বা অন্যের 'পরে ঠিক বলা যায় না। একটু পরে সে ধীরে ধীরে যেন আপন-মনে কহিল, ‘সব বিষয়েই, যতটা দরকার আমি তার চেয়ে অনেক বেশি জোর দিয়ে ফেলি, সেটা যে অন্যের পক্ষে কতটা অসহ্য তা আমার ঠিক মনে থাকে না।’

 বিনয় গৌরের কাছে আসিয়া সস্নেহে তার হাত ধরিল।

গোরা ও বিনয় ছাত হইতে নামিয়া যাইবার উপক্রম করিতেছে, এমন সময় গোরার মা উপরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। বিনয় তাঁহার পায়ের ধুলা

২১