পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

সাদৃশ্য আছে। তাহাকে দেখিয়া বিনয়ের মনে ভারী একটা স্নেহ এবং আনন্দ জন্মিল।

 ছেলেটি বেশ সপ্রতিভ। সে ঘরে ঢুকিয়া দেয়ালে একটা ছবি দেখিয়াই জিজ্ঞাসা করিল, “এ কার ছবি?”

 বিনয় কহিল, “এ আমার একজন বন্ধুর ছবি।”

 ছেলেটি জিজ্ঞাসা করিল, “বন্ধুর ছবি? আপনার বন্ধু কে?”

 বিনয় হাসিয়া কহিল, “তুমি তাঁকে চিনবে না। আমার বন্ধু গৌরমোহন, তাঁকে গোরা বলি। আমরা ছেলেবেলা থেকে একসঙ্গে পড়েছি।”

 “এখনো পড়েন?”

 “না, এখন আর পড়ি নে।”

 “আপনার সব পড়া হয়ে গেছে?”

 বিনয় এই ছোটো ছেলেটির কাছেও গর্ব করিবার প্রলোভন সম্বরণ করিতে না পারিয়া কহিল, “হাঁ, সব পড়া হয়ে গেছে।”

 ছেলেটি বিস্মিত হইয়া একটু নিশ্বাস ফেলিল। সে বোধ হয় ভাবিল, এত বিদ্যা সেও কত দিনে শেষ করিতে পারিবে।

 বিনয়। তোমার নাম কী?

 “আমার নাম শ্রীসতীশচন্দ্র মুখখাপাধ্যায়।”

 বিনয় বিস্মিত হইয়া কহিল, “মুখখাপাধ্যায়?”

 তাহার পরে একটু একটু করিয়া পরিচয় পাওয়া গেল। পরেশবাবু ইহাদের পিতা নহেন— তিনি ইহাদের দুই ভাইবোনকে ছেলেবেলা হইতে পালন করিয়াছেন। ইহার দিদির নাম আগে ছিল ‘রাধারানী’— পরেশবাবুর স্ত্রী তাহা পরিবর্তন করিয়া ‘সুচরিতা’ নাম রাখিয়াছেন।

 দেখিতে দেখিতে বিনয়ের সঙ্গে সতীশের খুব ভাব হইয়া গেল। সতীশ যখন বাড়ি যাইতে উদ্যত হইল বিনয় কহিল, “তুমি একলা যেতে পারবে?”

 সে গর্ব করিয়া কহিল, “আমি তো একলা যাই।”

 বিনয় কহিল, “আমি তোমাকে পৌঁছে দিই গে।”

১৩