পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 বিনয়। বল কী। তার পরে?

 গোরা। আর তার পরে! মরার বাড়া তো গাল নেই। ব্রাহ্মণের ছেলে হয়ে তুমি গো-ভাগাড়ে গিয়ে মরবে, তোমার আচার বিচার কিছুই থাকবে না, কম্পাস-ভাঙা কাণ্ডারীর মতো তোমার পূর্ব-পশ্চিমের জ্ঞান লোপ পেয়ে যাবে— তখন মনে হবে, জাহাজ বন্দরে উত্তীর্ণ করাই কুসংস্কার, সংকীর্ণতা— কেবল না-হক ভেসে চলে যাওয়াই যথার্থ জাহাজ চালানো। কিন্তু এ-সব কথা নিয়ে বকাবকি করতে আমার ধৈর্য থাকে না— আমি বলি, তুমি যাও। অধঃপাতের মুখের সামনে পা বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের সুদ্ধ কেন ভয়ে ভয়ে রেখে দিয়েছ।

 বিনয় হাসিয়া উঠিল; কহিল, “ডাক্তার আশা ছেড়ে দিলেই যে রোগী সব সময়ে মরে তা নয়। আমি তো নিদেন-কালের কোনো লক্ষণ বুঝতে পারছি নে।”

 গোরা। পারছ না?

 বিনয়। না।

 গোরা। নাড়ী ছাড়ে ছাড়ে করছে না?

 বিনয়। না, দিব্যি জোর আছে।

 গোরা। মনে হচ্ছে না যে, শ্রীহস্তে যদি পরিবেষণ করে তবে ম্লেচ্ছের অন্নই দেবতার ভোগ?

 বিনয় অত্যন্ত সংকুচিত হইয়া উঠিল; কহিল, “গোরা, বস্, এইবার থামো।”

 গোরা। কেন, এর মধ্যে তো আব্‌রুর কোনো কথা নেই। শ্রীহস্ত ততা অসূর্যম্পশ্য নয়। পুরুষমানুষের সঙ্গে যার শেক্হ্যাণ্ড চলে সেই পবিত্র করপল্লবের উল্লেখটি পর্যন্ত যখন তোমার সহ্য হল না, তদা নাশংসে মরণায় সঞ্জয়!

 বিনয়। দেখো গোরা, আমি স্ত্রীজাতিকে ভক্তিকরে থাকি— আমাদের শাস্ত্রেও—

১৮