পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

তাকাও না, তাই যেটা তোমার নজরে পড়ে না সেটাকেই তুমি কল্পনা বলে উড়িয়ে দিতে চাও। কিন্তু আমি তোমাকে বলছি, আমি কতবার দেখেছি, মা যেন কিসের জন্যে একটা ভাবনা পুষে রেখেছেন— কী যেন একটা ঠিকমত মিলিয়ে দিতে পারছেন না— সেই জন্যে ওঁর ঘর-করনার ভিতরে একটা দুঃখ আছে। গোরা, তুমি ওঁর কথাগুলো একটু কান পেতে শুনো।

 গোরা। কান পেতে যতটা শোনা যায় তা আমি শুনে থাকি তার চেয়ে বেশি শোনবার চেষ্টা করলে ভুল শোনবার সম্ভাবনা আছে বলে সে চেষ্টাই করি নে।

মত হিসাবে একটা কথা যেমনতরো শুনিতে হয়, মানুষের উপর প্রয়োগ করিবার বেলায় সকল সময় তাহার সেই একান্ত নিশ্চিত ভাবটা থাকে না— অন্তত বিনয়ের কাছে থাকে না— বিনয়ের হৃদয়বৃত্তি অত্যন্ত প্রবল। তাই তর্কের সময় সে একটা মতকে খুব উচ্চস্বরে মানিয়া থাকে, কিন্তু ব্যবহারের বেলা মানুষকে তাহার চেয়ে বেশি না মানিয়া থাকিতে পারে না। এমনকি গোরার প্রচারিত মতগুলি বিনয় যে গ্রহণ করিয়াছে তাহা কতটা মতের খাতিরে আর কতটা গোরার প্রতি তাহার একান্ত আলোবাসার টানে তাহা বলা শক্ত।

 গোরাদের বাড়ি হইতে বাহির হইয়া বাসায় ফিরিবার সময় বর্ষার সন্ধ্যায় যখন সে কাদা বাঁচাইয়া ধীরে ধীরে রাস্তায় চলিতেছিল তখন মত এবং মানুষে তাহার মনের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব বাধাইয়া দিয়াছিল।

 এখনকার কালের নানাপ্রকার প্রকাশ্য এবং গোপন আঘাত হইতে সমাজ যদি আত্মরক্ষা করিয়া চলিতে চায় তবে খাওয়া-ছোঁওয়া প্রভৃতি সকল বিষয়ে তাহাকে বিশেষ ভাবে সতর্ক হইতে হইবে, এই মতটি বিনয় গোরার

২৭