পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

বসিলেন এবং ঘরের আসবাবপত্র বেশ ভালো করিয়া নিরীক্ষণ করিয়া কহিলেন, “দেখো, বিনয়, তোমার বাসা যে আমি চিনি নে তা নয়— মাঝে মাঝে তোমার খবর নিয়ে যাই এমন ইচ্ছাও করে। কিন্তু, আমি জানি তোমরা আজকালকার ভালো ছেলে, তোমাদের এখানে তামাকটি পাবার জো নেই, তাই বিশেষ প্রয়োজন না হলে—”

 বিনয়কে ব্যস্ত হইয়া উঠিতে দেখিয়া মহিম কহিলেন, “তুমি ভাবছ এখনি বাজার থেকে নতুন হুঁকো কিনে এনে আমাকে তামাক খাওয়াবে, সে চেষ্টা কোরো না। তামাক না দিলে ক্ষমা করতে পারব, কিন্তু নতুন হুঁকোয় আনাড়ি হাতের সাজা তামাক আমার সহ্য হবে না।”

 এই বলিয়া মহিম বিছানা হইতে একটা হাতপাখা তুলিয়া লইয়া হাওয়া খাইতে খাইতে কহিলেন, “আজ রবিবারের দিবানিদ্রাটা সম্পূর্ণ মাটি করে তোমার এখানে এসেছি, তার একটু কারণ আছে। আমার একটি উপকার তোমাকে করতেই হবে।”

 বিনয় “কী উপকার” জিজ্ঞাসা করিল। মহিম কহিলেন, “আগে কথা দাও, তবে বলব।”

 বিনয়। আমার দ্বারা যদি সম্ভব হয় তবে তো?

 মহিম। কেবলমাত্র তোমার দ্বারাই সম্ভব। আর কিছু নয়, তুমি একবার ‘হাঁ’ বললেই হয়।

 বিনয়। আমাকে এত করে কেন বলছেন। আপনি তো জানেন, আমি আপনাদের ঘরেরই লোক— পারলে আপনার উপকার করব না, এ হতেই পারে না।

 মহিম পকেট হইতে একটা পানের দোনা বাহির করিয়া তাহা হইতে গোটা দুয়েক পান বিনয়কে দিয়া বাকি তিনটে নিজের মুখে পুরিলেন ও চিবাইতে চিবাইতে কহিলেন, “আমার শশিমুখীকে তো তুমি জানই। দেখতে-শুনতে নেহাত মন্দ নয়, অর্থাৎ বাপের মতো হয় নি। বয়স প্রায় দশের কাছাকাছি হল, এখন ওকে পাত্রস্থ করবার সময় হয়েছে। কোন্

৮৯