পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ব্যবধান আছে ইহা বিনয় নিজেও অনুভব করে।

 বাড়িতে আসিয়া পৌঁছিতেই দেখা গেল মহিম পথের দিকে চাহিয়া দ্বারের কাছে দাঁড়াইয়া আছেন। দুই বন্ধুকে দেখিয়া তিনি কহিলেন, “ব্যাপারখানা কী! কাল তো তোমাদের সমস্ত রাত না ঘুমিয়েই কেটেছে— আমি ভাবছিলুম দুজনে বুঝি বা ফুটপাথের উপরে কোথাও আরামে ঘুমিয়ে পড়েছ! বেলা তো কম হয় নি। যাও বিনয়, নাইতে যাও।”

 বিনয়কে তাগিদ করিয়া নাহিতে পাঠাইয়া মহিম গোরাকে লইয়া পড়িলেন; কহিলেন, “দেখো গোরা, তোমাকে যে কথাটা বলেছিলুম সেটা একটু বিবেচনা করে দেখো। বিনয়কে যদি তোমার অনাচারী বলে সন্দেহ হয় তা হলে আজকালকার বাজারে হিন্দু পাত্র পাব কোথায়? শুধু হিঁদুয়ানি হলেও তো চলবে না— লেখা-পড়াও তো চাই! ঐ লেখাপড়াতে হিঁদুয়ানিতে মিললে যে পদার্থটা হয় সেটা আমাদের হিন্দুমতে ঠিক শাস্ত্রীয় জিনিস নয় বটে, কিন্তু মন্দ জিনিসও নয়। যদি তোমার মেয়ে থাকত তা হলে এ বিষয়ে আমার সঙ্গে তোমার মতের ঠিক মিল হয়ে যেত।”

 গোরা কহিল, “তা, বেশ তো— বিনয় বোধ হয় আপত্তি করবে না।”

 মহিম কহিল, “শোনো একবার! বিনয়ের আপত্তির জন্য কে ভাবছে। তোমার আপত্তিকেই তো ডরাই। তুমি নিজের মুখে একবার বিনয়কে অনুরোধ করো, আমি আর কিছু চাই নে— তাতে যদি ফল না হয় তো না হবে।”

 গোরা কহিল, “আচ্ছা।”

 মহিম মনে মনে কহিল “এইবার ময়রার দোকানে সন্দেশ এবং গয়লার দোকানে দই-ক্ষীর ফরমাশ দিতে পারি।'

 গোরা অবসরক্রমে বিনয়কে কহিল, “শশিমুখীর সঙ্গে তোমার বিবাহের জন্য দাদা ভারি পীড়াপীড়ি আরম্ভ করেছেন। এখন তুমি কী বল?”

 বিনয়। আগে তোমার কী ইচ্ছা সেইটে বলো।

 গোরা। আমি তো বলি মন্দ কী!

১৩২