দিদি, তুমি বোঝ নি? সত্যি বলো।”
সুচরিতা ললিতার মতো এ কথা এমন করিয়া ভাবেই নাই। কারণ, গোরাকে সম্পূর্ণরূপে জানিবার জন্যই তাহার কৌতূহল ব্যগ্র হইয়াছিল; বিনয়কে স্বতন্ত্র করিয়া দেখিবার জন্য তাহার আগ্রহই ছিল না। সুচরিতা ললিতার প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর না দিয়া কহিল, “আচ্ছা, বেশ, তোর কথাই মেনে নেওয়া গেল— তা কী করতে হবে বল্।”
ললিতা। আমার ইচ্ছা করে ওঁর বন্ধুর বাঁধন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওঁকে স্বাধীন করে দিতে।
সুচরিতা। চেষ্টা করে দেখ্-না ভাই।
ললিতা। আমার চেষ্টায় হবে না— তুমি একটু মনে করলেই হয়।
সুচরিতা যদিও ভিতরে ভিতরে বুঝিয়াছিল যে, বিনয় তাহার প্রতি অনুরক্ত তবু সে ললিতার কথা হাসিয়া উড়াইয়া দিবার চেষ্টা করিল।
ললিতা কহিল, “গৌরমোহনবাবুর শাসন কাটিয়েও উনি যে তোমার কাছে এমন করে ধরা দিতে আসছেন তাতেই আমার ওঁকে ভালো লাগে; ওঁর অবস্থার কেউ হলে ব্রাহ্ম-মেয়েদের গাল দিয়ে নাটক লিখত— ওঁর মন এখনো খোলসা আছে, তোমাকে ভালোবাসেন আর বাবাকে ভক্তি করেন এই তার প্রমাণ। বিনয়বাবুকে ওঁর নিজের ভাবে খাড়া করিয়ে দিতে হবেই দিদি। উনি যে কেবলই গৌরমোহনবাবুকে প্রচার করতে থাকেন সে আমার অসহ্য বোধ হয়।”
এমন সময় “দিদি দিদি” করিয়া সতীশ ঘরে আসিয়া প্রবেশ করিল। বিনয় তাহাকে আজ গড়ের মাঠে সার্কাস দেখাইতে লইয়া গিয়াছিল। যদিও অনেক রাত্রি হইয়াছিল তবু তাহার এই প্রথম সার্কাস দেখার উৎসাহ সে সম্বরণ করিতে পারিতেছিল না। সার্কাসের বর্ণনা করিয়া সে কহিল, “বিনয়বাবুকে আজ আমার বিছানায় ধরে আনছিলুম। তিনি বাড়িতে ঢুকেছিলেন, তার পরে আবার চলে গেলেন। বললেন কাল আসবেন। দিদি, আমি তাঁকে বলেছি তোমাদের একদিন সার্কাস দেখাতে নিয়ে যেতে।”
১৪৯