পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

কোনো ক্ষতি হত না।”

 আনন্দময়ী নিজের ঘাড়ে সমস্ত দোষ লইলেন, কহিলেন, “বাপ, তোকে পাছে হারাই এই ভয়েই আমি এত পাপ করেছি। শেষে যদি তাই ঘটে, তুই যদি আজ আমাকে ছেড়ে যাস, তা হলে কাউকে দোষ দিতে পারব না। গোরা, কিন্তু সে আমার মৃত্যুদণ্ড হবে যে বাপ!”

 গোরা শুধু কেবল কহিল, “মা!”

 গোরার মুখে সেই সম্বোধন শুনিয়া এতক্ষণ পরে আনন্দময়ীর রুদ্ধ অশ্রু উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিল।

 গোরা কহিল, “মা, এখন আমি একবার পরেশবাবুর বাড়ি যাব।”

 আনন্দময়ীর বুকের ভার লাঘব হইয়া গেল। তিনি কহিলেন, “যাও বাবা।”


 তাঁহার আশু মরিবার আশঙ্কা নাই, অথচ গোরার কাছে কথাটা প্রকাশ হইয়া পড়িল- ইহাতে কৃষ্ণদয়াল অত্যন্ত ত্রস্ত হইয়া উঠিলেন। কহিলেন, “দেখো গোরা, কথাটা কারও কাছে প্রকাশ করবার তো দরকার দেখি নে। কেবল, তুমি একটু বুঝেসুঝে বাঁচিয়ে চললেই যেমন চলছিল তেমনি চলে যাবে, কেউ টেরও পাবে না।”

 গোরা তাঁহার কোনো উত্তর না দিয়া বাহির হইয়া গেল। কৃষ্ণদয়ালের সঙ্গে তাহার কোনো সম্বন্ধ নাই, ইহা স্মরণ করিয়া সে আরাম পাইল।

 মহিমের হঠাৎ আপিস কামাই করিবার কোনো উপায় ছিল না। তিনি ডাক্তার প্রভৃতির সমস্ত বন্দোবস্ত করিয়া দিয়া একবার কেবল সাহেবকে বলিয়া ছুটি লইতে গিয়াছিলেন। গোরা যেই বাড়ির বাহির হইতেছে এমন সময়ে মহিম আসিয়া উপস্থিত হইলেন; কহিলেন, “গোরা, যাচ্ছ কোথায়?”

 গোরা কহিল, “ভালো খবর। ডাক্তার এসেছিল। বললে, কোনো ভয় নেই।”

 মহিম অত্যন্ত আরাম পাইয়া কহিলেন, “বাঁচালে। পরশু একটা দিন

৫৮৬