পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিবাহকে আমি কিছুমাত্র অসম্ভব বা অন্যায় বলে মনে করি নে।”

 হারান বলিয়া উঠিলেন, “কিন্তু তিনি কি ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করবেন স্থির হয়েছে?”

 ললিতা কহিল, “কিছুই স্থির হয় নি— আর দীক্ষা গ্রহণ করতেই হবে এমনই বা কী কথা আছে!"

 বরদাসুন্দরী এতক্ষণ কোনো কথা বলেন নাই— তাঁর মনে মনে ইচ্ছা ছিল আজ যেন হারানবাবুর জিত হয় এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করিয়া পরেশবাবুকে অনুতাপ করিতে হয়। তিনি আর থাকিতে পারিলেন না; বলিয়া উঠিলেন, “ললিতা, তুই পাগল হয়েছিস না কি! বলছিস কী!"

 ললিতা কহিল, “না মা, পাগলের কথা নয়— যা বলছি বিবেচনা করেই বলছি। আমাকে যে এমন করে চার দিক থেকে বাঁধতে আসবে, সে আমি সহ্য করতে পারব না— আমি হারানবাবুদের এই সমাজের থেকে মুক্ত হব।”

 হারান কহিলেন, “উচ্ছৃঙ্খলতাকে তুমি মুক্তি বল!"

 ললিতা কহিল, “না, নীচতার আক্রমণ থেকে, অসত্যের দাসত্ব থেকে মুক্তিকেই আমি মুক্তি বলি। যেখানে আমি কোনো অন্যায়, কোনো অধর্ম দেখছি নে সেখানে ব্রাহ্মসমাজ আমাকে কেন স্পর্শ করবে, কেন বাধা দেবে?”

 হারান স্পর্ধা প্রকাশপূর্বক কহিলেন, “পরেশবাবু, এই দেখুন। আমি জানতুম শেষকালে এইরকম একটি কাণ্ড ঘটবে। আমি যতটা পেরেছি আপনাদের সাবধান করবার চেষ্টা করেছি— কোনো ফল হয় নি।”

 ললিতা কহিল, “দেখুন পানুবাবু, আপনাকেও সাবধান করে দেবার একটা বিষয় আছে— আপনার চেয়ে যাঁরা সকল বিষয়েই বড়ো তাঁদের সাবধান করে দেবার অহংকার আপনি মনে রাখবেন না।”

 এই কথা বলিয়াই ললিতা ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল।

 বরদাসুন্দরী কহিলেন, “এ-সব কী কাণ্ড হচ্ছে! এখন কী করতে হবে, পরামর্শ করো।”

 পরেশবাবু কহিলেন, “যা কর্তব্য তাই পালন করতে হবে, কিন্তু

৩৭৫