পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

না। কর্তব্যবুদ্ধিকে উপলক্ষ করিয়া সে যে অনেক দিনের সংযমের বাঁধকে অনাবশ্যক বলিয়া ভাঙিয়া দিয়া বসিয়া আছে। মন আগে যেখানে ভয়ে ভয়ে পা বাড়াইত এবং অপরাধীর মতো সসংকোচে ফিরিয়া আসিত সেখানে সে যে ঘর জুড়িয়া বসিয়া লঙ্কাভাগ করিয়া লইয়াছে— এখন তাহাকে ফেরানো কঠিন। যে কর্তব্যবুদ্ধি তাহাকে হাতে ধরিয়া এ জায়গাটাতে আনিয়াছে সে যখন বলিতেছে “আর দরকার নাই, চলো ভাই, ফিরি'— মন বলে, “তোমার দরকার না থাকে তুমি ফেরো, আমি এইখানেই রহিয়া গেলাম।'

 পরেশ যখন কোথাও কোনো আড়াল রাখিতে দিলেন না তখন বিনয় বলিয়া উঠিল, “আমি যে কর্তব্যের অনুরোধে একটা কষ্ট স্বীকার করতে যাচ্ছি এমন কথা মনেও করবেন না। আপনারা যদি সম্মতি দেন তবে আমার পক্ষে এমন সৌভাগ্য আর-কিছুই হতে পারে না— কেবল আমার ভয় হয় পাছে —"

 সত্যপ্রিয় পরেশবাবু অসংকোচে কহিলেন, “তুমি যা ভয় করছ তার কোনো হেতু নেই। আমি সুচরিতার কাছ থেকে শুনেছি ললিতার মন তোমার প্রতি বিমুখ নয়।”

 বিনয়ের মনের মধ্যে একটা আনন্দের বিদ্যুৎ খেলিয়া গেল। ললিতার মনের একটি গূঢ় কথা সুচরিতার কাছে ব্যক্ত হইয়াছে। কবে ব্যক্ত হইল, কেমন করিয়া ব্যক্ত হইল? দুই সখীর কাছে এই-যে আভাসে অনুমানে একটা জানাজানি হইয়াছে ইহার সুতীব্র রহস্যময় সুখ বিনয়কে যেন বিদ্ধ করিতে লাগিল।

 বিনয় বলিয়া উঠিল, “আমাকে যদি আপনারা যোগ্য মনে করেন তবে তার চেয়ে আনন্দের কথা আমার পক্ষে আর-কিছুই হতে পারে না।”

 পরেশবাবু কহিলেন, “তুমি একটু অপেক্ষা করো। আমি একবার উপর থেকে আসি।”

 তিনি বরদাসুন্দরীর মত লইতে গেলেন। বরদাসুন্দরী কহিলেন, “বিনয়কে তো দীক্ষা নিতে হবে।”

৩৯২