পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 গোরা জিজ্ঞাসা করিল, “কথাটা পাকা হয়ে গেছে?”

 মহিম কহিলেন, “হাঁ”

 গোরা। দিনক্ষণ একেবারে স্থির?

 মহিম। স্থির বৈকি, মাঘের পূণিমাতিথিতে। সে আর বেশি দেরি নেই। বাপ বলেছেন হীরেমানিকে কাজ নেই, কিন্তু খুব ভারী সোনার গয়না চাই। এখন, কী করলে সোনার দর না বাড়িয়ে সোনার ভার বাড়াতে পারি সেকরার সঙ্গে কিছুদিন তারই পরামর্শ করতে হবে।”

 গোরা কহিল, “কিন্তু এত বেশি তাড়াতাড়ি করবার কী দরকার আছে? অবিনাশ যে অল্প দিনের মধ্যে ব্রাহ্মসমাজে ঢুকবে এমন আশঙ্কা নেই।”

 মহিম কহিলেন, “তা নেই বটে, কিন্তু বাবার শরীর ইদানীং বড় খারাপ হয়ে উঠেছে সেটা তোমরা লক্ষ্য করে দেখছ না। ডাক্তারেরা যতই আপত্তি করছে ওঁর নিয়মের মাত্রা আরও ততই বাড়িয়ে তুলছেন। আজকাল যে সন্ন্যাসী ওঁর সঙ্গে জুটেছে সে ওঁকে তিন বেলা স্নান করায়, তার উপরে আবার এমনি হঠযোগ লাগিয়েছে যে চোখের তারা ভুরু নিশ্বাসপ্রশ্বাস নাড়িটাড়ি সমস্ত একেবারে উল্‌টোপাল্‌টা হবার জো হয়েছে। বাবা বেঁচে থাকতে থাকতে শশীর বিয়েটা হয়ে গেলেই সুবিধা হয়; ওঁর পেন্‌শনের জমা টাকাটা ওঙ্কারানন্দ স্বামীর হাতে পড়বার পূর্বেই কাজটা সারতে পারলে আমাকে বেশি ভাবতে হয় না। বাবার কাছে কথাটা কাল পেড়েওছিলুম- দেখলুম বড়ো সহজ ব্যাপার নয়। ভেবেছি ওই সন্ন্যাসী বেটাকে কিছুদিন খুব কষে গাঁজা খাইয়ে বশ করে নিয়ে ওরই দ্বারা কাজ উদ্ধার করতে হবে। যারা গৃহস্থ, যাদের টাকার দরকার সব চেয়ে বেশি, বাবার টাকা তাদের ভোগে আসবে না এটা তুমি নিশ্চয় জেনো। আমার মুশকিল হয়েছে এই যে, অন্যের বাবা কষে টাকা তলব করে আর নিজের বাবা টাকা দেবার কথা শুনলেই প্রাণায়াম করতে বসে যায়। আমি এখন ওই এগারো বছরের মেয়েটাকে গলায় বেঁধে কি জলে ডুব দিয়ে মরব।”

৪৮৪