৫৮
বিনয় আনন্দময়ীকে কহিল, “দেখো মা, আমি তোমাকে সত্য বলছি, যতবার আমি ঠাকুরকে প্রণাম করেছি আমার মনের ভিতরে কেমন লজ্জা বোধ হয়েছে। সে লজ্জা আমি চেপে দিয়েছি উল্টে আরও ঠাকুরপূজার পক্ষ নিয়ে ভালো ভালো প্রবন্ধ লিখেছি। কিন্তু সত্য তোমাকে বলছি, আমি যখন প্রণাম করেছি আমার মনের ভিতরটা তখন সায় দেয় নি।”
আনন্দময়ী কহিলেন, “তোর মন কি সহজ মন! তুই তো মোটামুটি করে কিছুই দেখতে পারিস নে। সব তাতেই একটা-কিছু সূক্ষ্ম কথা ভাবিস। সেই জন্যেই তোর মন থেকে খুঁৎখুঁৎ আর ঘোচ না।”
বিনয় কহিল, “ওই কথাই তো ঠিক। অতি সূক্ষ্ম বুদ্ধি বলেই আমি যা বিশ্বাস না করি তাও চুলচেরা যুক্তির দ্বারা প্রমাণ করতে পারি। সুবিধামত নিজেকে এবং অন্যকে ভোলাই। এতদিন আমি ধর্ম সম্বন্ধে যে-সমস্ত তর্ক করেছি সে ধর্মের দিক থেকে করি নি, দলের দিক থেকে করেছি।”
আনন্দময়ী কহিলেন, “ধর্মের দিকে যখন সত্যকার টান না থাকে তখন ওইরকমই ঘটে। তখন ধর্মটাও বংশ মান টাকাকড়ির মতোই অহংকার করবার সামগ্রী হয়ে দাঁড়ায়।”
বিনয়। হাঁ, তখন এটা যে ধর্ম সে কথা ভাবি নে, এটা আমাদের ধর্ম এই কথা মনে নিয়েই যুদ্ধ করে বেড়াই। আমিও এতকাল তাই করেছি। তবুও আমি নিজেকে যে নিঃশেষে ভোলাতে পেরেছি তা নয়; যেখানে আমার বিশ্বাস পৌঁচচ্ছে না সেখানে আমি ভক্তির ভাণ করেছি ব’লে বরাবর আমি নিজের কাছে নিজে লজ্জিত হয়েছি।
আনন্দময়ী কহিলেন, “সে কি আর আমি বুঝি নে। তোরা যে সাধারণ লোকের চেয়ে ঢের বেশি বাড়াবাড়ি করিস তার থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, মনের ভিতরটাতে ফাঁক আছে বলে সেইটে বোজাতে তোদের অনেক মসলা
৪৫২