পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রকার ভর্ৎসনা ও উপদেশ-দ্বারা চিঠি পূর্ণ করিয়াছে। সেইসঙ্গে, বিনয়ের মতলব যে ভালো নয়, সে যে দুইদিন পরেই তাহার ব্রাহ্ম স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া পুনরায় হিন্দুঘরে বিবাহ করিবে, এ-সমস্ত আলোচনাও ছিল।

 পরেশের পড়া হইলে পর হারান চিঠিখানি লইয়া পড়িলেন; কহিলেন, “ললিতা, এই চিঠি পড়ে তোমার রাগ হচ্ছে? কিন্তু এইরকম চিঠি লেখবার হেতু কি তুমিই ঘটাও নি? তুমি নিজের হাতে এই চিঠি কেমন করে লিখলে বল দেখি।”

 ললিতা মুহূর্তকাল স্তব্ধ থাকিয়া কহিল, “শৈলর সঙ্গে আপনার বুঝি এই সম্বন্ধে চিঠিপত্র চলছে?”

 হারান তাহার স্পষ্ট উত্তর না দিয়া কহিলেন, “ব্রাহ্মসমাজের প্রতি কর্তব্য স্মরণ করে শৈল তোমার এই চিঠি পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।”

 ললিতা শক্ত হইয়া দাঁড়াইয়া কহিল, “এখন ব্রাহ্মসমাজ কী বলতে চান বলুন।”

 হারান কহিলেন, “বিনয়বাবু ও তোমার সম্বন্ধে সমাজে এই-যে জনরব রাষ্ট্র হয়েছে এ আমি কোনোমতেই বিশ্বাস করতে পারি নে, কিন্তু তবু তোমার মুখ থেকে আমি এর স্পষ্ট প্রতিবাদ শুনতে চাই।”

 ললিতার দুই চক্ষু আগুনের মতো জ্বলিতে লাগিল— সে একটা চৌকির পিঠ কম্পিত হস্তে চাপিয়া ধরিয়া কহিল, “কেন, কোনোমতেই বিশ্বাস করতে পারেন না?”

 পরেশ ললিতার পিঠে হাত বুলাইয়া কহিলেন, “ললিতা, এখন তোমার মন স্থির নেই, এ কথা পরে আমার সঙ্গে হবে— এখন থাক্‌!"

 হারান কহিলেন, “পরেশবাবু, আপনি কথাটাকে চাপা দেবার চেষ্টা করবেন না।”

 ললিতা পুনর্বার জ্বলিয়া উঠিয়া কহিল, “চাপা দেবার চেষ্টা বাবা করবেন! আপনাদের মতো বাবা সত্যকে ভয় করেন না— সত্যকে বাবা ব্রাহ্মসমাজের চেয়েও বড়ো বলে জানেন। আমি আপনাকে বলছি বিনয়বাবুর সঙ্গে

৩৭৪