পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

জোড়-হাতে আমার এই মিনতি, তোমরা ওকে আর মাটি কোরো না। সংসারে আমার যে-কেউ ছিল সব ম’রে ঝ’রে কেবল ওই একটিতে এসে ঠেকেছে, ওরও ঠিক আপন বলতে আমি ছাড়া আর-কেউ নেই। ওকে তোমরা ছেড়ে দাও। ওদের ঘরে আরও তো ঢের বড়ো বড়ো মেয়ে আছে- ওই লাবণ্য আছে, লীলা আছে, তারাও বুদ্ধিমতী, পড়াশুনা করেছে; যদি তোমার কিছু বলবার থাকে ওদের কাছে গিয়ে বলোগে, কেউ তোমাকে মানা করবে না।”

 গোরা একেবারে স্তম্ভিত হইয়া বসিয়া রহিল। হরিমোহিনী কিছু ক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া পুনরায় কহিলেন, “ভেবে দেখো, ওকে তো বিয়েথাওয়া করতে হবে, বয়স তো যথেষ্ট হয়েছে। তুমি কি বলো ও চিরদিন এইরকম আইবুড়ো হয়েই থাকবে? গৃহধর্ম করাটা তো মেয়েমানুষের দরকার।”

 সাধারণভাবে এ সম্বন্ধে গোরার কোনো সংশয় ছিল না, তাহারও এই মত বটে, কিন্তু সুচরিতা সম্বন্ধে নিজের মতকে সে মনে মনেও কখনো প্রয়োগ করিয়া দেখে নাই। সুচরিতা গৃহিণী হইয়া কোনো এক গৃহস্থ-ঘরের অন্তঃপুরে ঘরকন্নায় নিযুক্ত আছে এ কল্পনা তাহার মনেও উঠে না। যেন সুচরিতা আজও যেমন আছে বরাবর ঠিক এমনিই থাকিবে।

 গোরা জিজ্ঞাসা করিল, “আপনার বোনঝির বিবাহের কথা কিছু ভেবেছেন নাকি?”

 হরিমোহিনী কহিলেন, “ভাবতে হয় বৈকি, আমি না হলে আর ভাববে কে!”

 গোরা প্রশ্ন করিল, “হিন্দু সমাজে কি ওঁর বিবাহ হতে পারবে?”

 হরিমোহিনী কহিলেন, “সে চেষ্টা তো করতে হবে। ও যদি আর গোল না করে, বেশ ঠিকমত চলে, তা হলে ওকে বেশ চালিয়ে দিতে পারব। সে আমি মনে মনে সব ঠিক করে রেখেছি, এতদিন ওর যেরকম গতিক ছিল সাহস ক’রে কিছু করে উঠতে পারি নি। এখন আবার দু দিন থেকে দেখছি ওর মনটা নরম হয়ে আসছে, তাই ভরসা হচ্ছে।”

৪৯৩