পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 পরদিন সকালবেলায় চিঠিখানি লইয়া ব্রাহ্মসমাজে যাইবার সময় দেখিলেন, সে চিঠি কে টুকরা টুকরা করিয়া ছিঁড়িয়া রাখিয়াছে।


৫৭

অপরাহ্নে সুচরিতা পরেশবাবুর কাছে যাইবে বলিয়া প্রস্তুত হইতেছিল, এমন সময় বেহারা আসিয়া খবর দিল একজন বাবু আসিয়াছেন।

 “কে বাবু? বিনয়বাবু?”

 বেহারা কহিল, “না, খুব গৌরবর্ণ, লম্বা একটি বাবু।”

 সুচরিতা চমকিয়া উঠিয়া কহিল, “বাবুকে উপরের ঘরে এনে বসাও।”

 আজ সুচরিতা কী কাপড় পরিয়াছে ও কেমন করিয়া পরিয়াছে এত ক্ষণ তাহা চিন্তাও করে নাই। এখন আয়নার সম্মুখে দাঁড়াইয়া কাপড়খানা কিছুতেই তাহার পছন্দ হইল না। তখন বদলাইবার সময় ছিল না। কম্পিত হন্তে কাপড়ের আঁচলে, চুলে, একটু-আধটু পারিপাট্য সাধন করিয়া স্পন্দিত হৃৎপিণ্ড লইয়া সুচরিতা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। তাহার টেবিলের উপর গোরার রচনাবলী পড়িয়া ছিল, সে কথা তাহার মনেই ছিল। ঠিক সেই টেবিলের সম্মুখেই চৌকিতে গোরা বসিয়া আছে। বইগুলি নির্লজ্জভাবে ঠিক গোরার চোখের উপরে পড়িয়া আছে- সেগুলি ঢাকা দিবার বা সাইবার কোনো উপায়মাত্র নাই।

 “মাসিমা আপনার সঙ্গে দেখা করবার জন্যে অনেক দিন থেকে ব্যস্ত হয়ে রয়েছেন, তাকে খবর দিই গে।” বলিয়া সুচরিতা ঘরে প্রবেশ করিয়াই চলিয়া গেল- সে একলা গোরার সঙ্গে আলাপ করিবার মতো জোর পাইল না।

 কিছু ক্ষণ পরে সুচরিতা হরিমোহিনীকে সঙ্গে করিয়া লইয়া আসিল। কিছুকাল হইতে হরিমোহিনী বিনয়ের কাছ হইতে গোরার মত বিশ্বাস ও নিষ্ঠা এবং তাহার জীবনের কথা শুনিয়া আসিতেছেন। প্রায় মাঝে মাঝে তাঁহার অনুরোধে সুচরিতা মধ্যাহ্নে তাঁহাকে গোরার লেখা পড়িয়া

৪৩৮