পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যে অল্প সম্বল তাহাতে কলিকাতার খরচ চলিবে না।

 বরদাসুন্দরী অকস্মাৎ ঝড়ের মতো আসিয়া যখন চলিয়া গেলেন, তখন বিনয় মাথা হেঁট করিয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিল।

 কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া হরিমোহিনী বলিয়া উঠিলেন, “আমি তীর্থে যাব, তোমরা কেউ আমাকে পৌঁছে দিয়ে আসতে পারবে বাবা?”

 বিনয় কহিল, “খুব পারব। কিন্তু তার আয়োজন করতে তো দু-চার দিন দেরি হবে, ততদিন চলো মাসি, তুমি আমার মার কাছে গিয়ে থাকবে।”

 হরিমোহিনী কহিলেন, “বাবা, আমার ভার বিষম ভার। বিধাতা আমার কপালের উপর কি বোঝা চাপিয়েছেন জানি নে, আমাকে কেউ বইতে পারে না। আমার শ্বশুরবাড়িতেও যখন আমার ভার সইল না তখনই আমার বোঝা উচিত ছিল। কিন্তু বড়ো অবুঝ মন বাবা— বুক যে খালি হয়ে গেছে, সেইটে ভরাবার জন্যে কেবলই ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছি আমার পোড়া ভাগ্যও যে সঙ্গে সঙ্গে চলেছে। আর থাক্‌ বাবা, আর-কারো বাড়িতে গিয়ে কাজ নেই— যিনি বিশ্বের বোঝা ব'ন তাঁরই পাদপদ্মে এবার আমি আশ্রয় গ্রহণ করব— আর আমি পারি নে।”

 বলিয়া বার বার করিয়া দুই চক্ষু মুছিতে লাগিলেন।

 বিনয় কহিল, “সে বললে হবে না মাসি! আমার মার সঙ্গে অন্য-কারো তুলনা করলে চলবে না। যিনি নিজের জীবনের সমস্ত ভার ভগবানকে সমর্পণ করতে পেরেছেন, তিনি অন্যের ভার বইতে ক্লেশ বোধ করেন না। যেমন আমার মা— আর যেমন এখানে দেখলেন পরেশবাবু। সে আমি শুনব না— একবার আমার তীর্থে তোমাকে বেড়িয়ে নিয়ে আসব, তার পরে তোমার তীর্থ আমি দেখতে যাব।”

 হরিমোহিনী কহিলেন, “তাদের তা হলে তো একবার খবর দিয়ে—"

 বিনয় কহিল, “আমরা গেলেই মা খবর পাবেন— সেইটেই হবে পাকা খবর।”

৩২৫