পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 সুচরিতা কহিল, “যা হোক, এতদিনে তো একটা জহরি জুটেছে। দাম যা দিতে চাচ্ছে তাতে আর দুঃখ করবার নেই, এখন আর আমাদের মতো আনাড়ির কাছ থেকে আদর যাচবার দরকারই হবে না।”

 ললিতা কহিল, “হবে না বৈকি। খুব হবে।”

 বলিয়া খুব জোরে সুচরিতার গাল টিপিয়া দিল, সে “উঃ” করিয়া উঠিল।

 “তোমার আদর আমার বরাবর চাই, সেটা ফাঁকি দিয়ে আর-কাউকে দিতে গেলে চলবে না।”

 সুচরিতা ললিতার কপোলের উপর কপোল রাখিয়া কহিল, “কাউকে দেব না, কাউকে দেব না।”

 ললিতা কহিল, “কাউকে না? একেবারে কাউকেই না?”

 সুচরিতা শুধু মাথা নাড়িল। ললিতা তখন একটু সরিয়া বসিয়া কহিল, “দেখো ভাই সুচিদিদি, তুমি তো ভাই জান, তুমি আর-কাউকে আদর করলে আমি কোনোদিন সইতে পারতুম না। এতদিন আমি তোমাকে বলি নি, আজ বলছি, যখন গৌরমোহনবাবু আমাদের বাড়ি আসতেন— না দিদি, অমন করলে চলবে না, আমার যা বলবার আছে আমি তা আজ বলবই-তোমার কাছে আমি কোনোদিন কিছুই লুকোই নি, কিন্তু কেন জানি নে ওই একটা কথা আমি কিছুতেই বলতে পারি নি, বরাবর সে জন্যে আমি কষ্ট পেয়েছি। সেই কথাটি না বলে আমি তোমার কাছ থেকে বিদায় হয়ে যেতে পারব না। যখন গৌরমোহনবাবু আমাদের বাড়ি আসতেন আমার ভারী রাগ হত—কেন রাগতুম? তুমি মনে করেছিলে কিছু বুঝতে পারি নি? আমি দেখেছিলুম, তুমি আমার কাছে তাঁর নামও করতে না, তাতে আমার আরও মনে রাগ হত। তুমি যে আমার চেয়ে তাঁকে ভালোবাসবে এ আমার অসহ্য বোধ হত- না ভাই দিদি, আমাকে বলতে দিতে হবে-সে জন্যে যে আমি কত কষ্ট পেয়েছি সে আর তোমাকে কী বলব। আজও তুমি আমার কাছে সে কথা কিছু বলবে না সে আমি জানি, তা নাই বললে, আমার আর রাগ নেই— আমি যে কত খুশি হব ভাই, যদি তোমার—”

৫১৫