পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

পরিচয়

ফেলিতে চাও, আমাদের কাজে তাহা আবশ্যক হইতে পারে। তোমাদের আচারব্যবহার কথাবার্তা বিশ্বাস শিক্ষা এবং শরীর হইতে অলংকারমাত্রই তোমরা ফেলিয়া দিতে চাও, কেননা, সভ্যতার ঠেলাঠেলিতে স্থান এবং সময়ের বড়ো অনটন হইয়াছে। কিন্তু আমাদের যাহা চিরন্তন কাজ, ঐ অলংকারগুলো ফেলিয়া দিলে তাহা একপ্রকার বন্ধ হইয়া যায়। আমাদের কত টুকিটাকি, কত ইটি-উটি, কত মিষ্টতা, কত শিষ্টতা, কত কথা, কত কাহিনী, কত ভাব, কত ভঙ্গি, কত:অবসর সঞ্চয় করিয়া তবে এই পৃথিবীর গৃহকার্য চালাইতে হয়। আমরা মষ্ট করিয়া হাসি, বিনয় করিয়া বলি, লজ্জা করিয়া কাজ করি, দীর্ঘকাল যত্ন করিয়া যেখানে যেটি পরিলে শোভা পায় সেটি পরি; এই জন্যই তোমাদের মাতার কাজ, তোমাদের স্ত্রীর কাজ এত সহজে করিতে পারি। যদি সত্যই সভ্যতার তাড়ায় অত্যাবশ্যক জ্ঞানবিজ্ঞান ছাড়া আর সমস্তই দূর হইয়া যায়, তবে এক বার দেখিবার ইচ্ছা আছে অনাথ শিশুসন্তানের এবং পুরুষের মতে এত বড়ো অসহায় এবং নির্বোধ জাতির কী দশাটা হয়।

 শ্রীযুক্ত বায়ু (ইহাকে সমীর বলা যাক) প্রথমটা এক বার হাসিয়া সমস্ত উড়াইয়া দিলেন। তিনি বলিলেন, ‘ক্ষিতির কথা ছাড়িয়া দাও; একটুখানি পিছন হঠিয়া, পাশ ফিরিয়া, নড়িয়া-চড়িয়া একটা সত্যকে নানা দিক হইতে পর্যবেক্ষণ করিতে গেলেই উহার চলৎশক্তিহীন মানসিক রাজ্যে এমনি একটা ভূমিকম্প উপস্থিত হয় যে, বেচারার বহুযত্ননির্মিত পাক মতগুলি কোনোটা বিদীর্ণ, কোনোটা ভূমিসাৎ হইয়া যায়। কাজেই ও ব্যক্তি বলে, দেবতা হইতে কীট পর্যন্ত সকলই মাটি হইতে উৎপন্ন; কারণ মাটির বাহিরে আর কিছু আছে স্বীকার করিতে গেলে আবার মাটি হইতে অনেকখানি নড়িতে হয়। উহাকে এই কথাটা বুঝানো আবশ্যক যে, মানুষের সহিত জড়ের সম্বন্ধ লইয়াই সংসার নহে, মানুষের