পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

গদ্য ও পদ্য

সহজ হয়, কিন্তু গদ্যের মধ্যে কবিত্ব একেবারে অচল।’

 বাস্‌! মনের কথা আর নহে। আমার শরৎপ্রভাতের নবীন ভাবাঙ্কুরটি প্রিয়বন্ধু ক্ষিতি তাঁহার তীক্ষ্ণ নিড়ানির একটি খোঁচায় একেবারে সমূলে উৎপাটিত করিয়া দিলেন। একটা তর্কের কথায় সহসা বিরুদ্ধ মত শুনিলে মানুষ তেমন অসহায় হইয়া পড়ে না, কিন্তু ভাবের কথায় কেহ মাঝখানে ব্যাঘাত করিলে বড়োই দুর্বল হইয়া পড়িতে হয়। কারণ, ভাবের কথায় শ্রোতার সহানুভূতির প্রতিই একমাত্র নির্ভর। শ্রোতা যদি বলিয়া উঠে ‘কী পাগলামি করিতেছ’, তবে কোনো যুক্তিশাস্ত্রে তাহার কোনো উত্তর খুঁজিয়া পাওয়া যায় না।

 এই জন্য ভাবের কথা পাড়িতে হইলে প্রাচীন গুণীরা শ্রোতাদের হাতে পায়ে ধরিয়া কাজ আরম্ভ করিতেন। বলিতেন, সুধীগণ মরালের মতো নীর পরিত্যাগ করিয়া ক্ষীর গ্রহণ করেন। নিজের অক্ষমতা স্বীকার করিয়া সভাস্থ লোকের গুণগ্রাহিতার প্রতি একান্ত নির্ভর প্রকাশ করিতেন। কখনো বা ভবভূতির ন্যায় সুমহৎ দম্ভের দ্বারা আরম্ভ হইতেই সকলকে অভিভূত করিয়া রাখিবার চেষ্টা করিতেন। এবং এত করিয়াও ঘরে ফিরিয়া আপনাকে ধিক্কার দিয়া বলিতেন, যে দেশে কাচ এবং মানিকের এক দর সে দেশকে নমস্কার। দেবতার কাছে প্রার্থনা করিতেন, ‘হে চতুর্মুখ, পাপের ফল আর যেমনই দাও সহ্য করিতে প্রস্তুত আছি কিন্তু অরসিকের কাছে রসের কথা বলা এ কপালে লিখিয়ো না, লিখিয়ো না, লিখিয়ে না।’

 বাস্তবিক, এমন শাস্তি আর নাই। জগতে অরসিক না থাকুক, এত বড়ো প্রার্থনা দেবতার কাছে করা যায় না, কারণ তাহা হইলে জগতের জনসংখ্যা অত্যন্ত হ্রাস হইয়া যায়। অরসিকের দ্বারাই পৃথিবীর অধিকাংশ কার্য সম্পন্ন হয়, তাহারা জনসমাজের পক্ষে অত্যন্ত

৮২