পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আনন্দময়ী বলিয়াছিলেন, “না না, তার তো কোনো দরকার দেখি নে।”

 বিনয় বলিল, “যদি তাঁরা পীড়াপীড়ি করেন?”

 আনন্দময়ী অনেকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া কহিয়াছিলেন, “না, এখানে পীড়াপীড়ি খাটবে না।”

 সুচরিতা আনন্দময়ীর আলোচনায় যোগ দিল না, সে চুপ করিয়াই রহিল। তিনি বুঝিলেন, সুচরিতার মন এখনো সায় দিতেছে না।

 আনন্দময়ী মনে মনে ভাবিতে লাগিলেন, “আমার মন যে সমাজের সমস্ত সংস্কার কাটাইয়াছে সে তো কেবল ঐ গোরার স্নেহে। তবে কি গোরার 'পরে সুচরিতার মন পড়ে নাই? যদি পড়িত তবে তো এই ছোটো কথাটাই এত বড়ো হইয়া উঠিত না।'

 আনন্দময়ীর মন একটুখানি বিমর্ষ হইয়া গেল। কারাগার হইতে গোরার বাহির হইতে আর দিন দুয়েক বাকি আছে মাত্র। তিনি মনে ভাবিতেছিলেন, তাহার জন্য একটা সুখের ক্ষেত্র প্রস্তুত হইয়া রহিয়াছে। এবারে যেমন করিয়া হোক গোরাকে বাঁধিতেই হইবে, নহিলে সে যে কোথায় কী বিপদে পড়িবে তাহার ঠিকানা নাই। কিন্তু গোরাকে বাঁধিয়া ফেলা তো যে সে মেয়ের কর্ম নয়। এ দিকে, কোনো হিন্দুসমাজের মেয়ের সঙ্গে গোরার বিবাহ দেওয়া অন্যায় হইবে— সেইজন্য এতদিন নানা কন্যাদায়গ্রস্তের দরখাস্ত একেবারে নামঞ্জুর করিয়াছেন। গোরা বলে “আমি বিবাহ করিব না'— তিনি মা হইয়া একদিনের জন্য প্রতিবাদ করেন নাই ইহাতে লোকে আশ্চর্য হইয়া যাইত। এবারে গোরার দু-একটা লক্ষণ দেখিয়া তিনি মনে মনে উৎফুল্ল হইয়াছিলেন। সেইজন্যই সুচরিতার নীরব বিরুদ্ধতা তাঁহাকে অত্যন্ত আঘাত করিল। কিন্তু তিনি সহজে হাল ছাড়িবার পাত্রী নন; মনে মনে কহিলেন, “আচ্ছা, দেখা যাক।'

৩৯০