পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

৬৮

গায়ে তসরের চায়না কোট, কোমরে একটা চাদর জড়ানো, হাতে একটা ক্যাম্বিসের ব্যাগ— স্বয়ং কৈলাস আসিয়া হরিমোহিনীকে প্রণাম করিল। তাহার বয়স পঁয়ত্রিশের কাছাকাছি হইবে, বেঁটেখাটো আঁটসাট মজবুত গোছের চেহারা, কামানো গোঁফ দাড়ি কিছুদিন ক্ষৌরকর্মের অভাবে কুশাগ্রের ন্যায় অঙ্কুরিত হইয়া উঠিয়াছে।

 অনেক দিন পরে শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়কে দেখিয়া আনন্দিত হইয়া হরিমোহিনী বলিয়া উঠিলেন, “একি, ঠাকুরপো যে! বোসো, বোসো।”

 বলিয়া তাড়াতাড়ি একখানি মাদুর পাতিয়া দিলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “হাত-পা ধোবে?”

কৈলাস কহিল, “না, দরকার নেই। তা, শরীর তো বেশ ভালোই দেখা যাচ্ছে।”

 শরীর ভালো থাকাটাকে একটা অপবাদ জ্ঞান করিয়া হরিমোহিনী কহিলেন, “ভালো আর কই আছে।”

 বলিয়া নানাপ্রকার ব্যাধির তালিকা দিলেন, ও কহিলেন, “তা, পোড়া শরীর গেলেই যে বঁচি, মরণ তো হয় না।”

 জীবনের প্রতি এইরূপ উপেক্ষায় কৈলাস আপত্তি প্রকাশ করিল এবং যদিচ দাদা নাই তথাপি হরিমোহিনী থাকাতে তাহাদের যে একটা মস্ত ভরসা আছে তাহারই প্রমাণস্বরূপে কহিল, “এই দেখোনা কেন, তুমি আছ বলেই কলকাতায় আসা হল— তবু একটা দাঁড়াবার জায়গা পাওয়া গেল।”

 আত্মীয়স্বজনের ও গ্রামবাসীদের সমস্ত সংবাদ আদ্যোপান্ত বিবৃত করিয়া কৈলাস হঠাৎ চারি দিকে চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিল,“এ বাড়িটা বুঝি তারই?”

 হরিমোহিনী কহিলেন, “হাঁ।”

 কৈলাস কহিল, “পাকা বাড়ি দেখছি।”

৫৪২