পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

রাখিত না।

 সুচরিতার মনে এই-যে একটি চিন্তা চলিতেছিল পরেশ ঠিক সেই কথাটাই আপনি তুলিলেন; কহিলেন, “তোমাকে এবার ডাকতে পারি নি রাধে।”

 সুচরিতা জিজ্ঞাসা করিল, “কেন বাবা?”

 সুচরিতার এই প্রশ্নে পরেশ কোনো উত্তর না দিয়া তাহার মুখের দিকে নিরীক্ষণ করিয়া রহিলেন। সুচরিতা আর থাকিতে পারিল না। সে মুখ নত করিয়া কহিল, “তুমি ভাবছিলে, আমার মনের মধ্যে একটা পরিবর্তন ঘটেছে।”

 পরেশ কহিলেন, “হাঁ, তাই ভাবছিলুম, আমি তোমাকে কোনোরকম অনুরোধ করে সংকোচে ফেলব না।”

 সুচরিতা কহিল, “বাবা, আমি তোমাকে সব কথা বলব মনে করেছিলুম, কিন্তু তোমার যে দেখা পাই নি। সেই জন্যেই আজ আমি এসেছি। আমি যে তোমাকে বেশ ভালো করে আমার মনের ভাব বলতে পারব, আমার সে ক্ষমতা নেই। আমার ভয় হয়, পাছে ঠিকটি তোমার কাছে বলা না হয়।”

 পরেশ কহিলেন, “আমি জানি, এ-সব কথা স্পষ্ট করে বলা সহজ নয়। তুমি একটা জিনিস তোমার মনে কেবল ভাবের মধ্যে পেয়েছ, তাকে অনুভব করছ, কিন্তু তার আকারপ্রকার তোমার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে নি।”

 সুচরিতা আরাম পাইয়া কহিল, “হাঁ, ঠিক তাই। কিন্তু আমার অনুভব এমন প্রবল, সে আমি তোমাকে কী বলব। আমি ঠিক যেন একটা নূতন জীবন পেয়েছি, সে একটা নূতন চেতনা। আমি এমন দিক থেকে এমন করে, নিজেকে কখনো দেখি নি। আমার সঙ্গে এতদিন আমার দেশের অতীত এবং ভবিষ্যৎ কালের কোনো সম্বন্ধই ছিল না- কিন্তু সেই মস্তবড়ো সম্বন্ধটা যে কতবড়ো সত্য জিনিস আজ সেই উপলব্ধি আমার হৃদয়ের মধ্যে এমনি আশ্চর্য করে পেয়েছি যে, সে আর কিছুতে ভুলতে পারছি নে। দেখো বাবা, আমি তোমাকে সত্য বলছি, আমি হিন্দু এ কথা আগে কোনোমতে

৫২১