পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ও বাড়িতে যাইত না এবং এই জন্যই পরেশ প্রত্যহ একবার বা দুইবার স্বয়ং সুচরিতার বাড়িতে আসিয়া তাহার সঙ্গে দেখা করিয়া যাইতেন।

 কয়দিন পরেশবাবু নানা চিন্তা ও কাজের তাড়ায় সুচরিতার ওখানে আসিতে পারেন নাই। এই কয়দিন সুচরিতা প্রত্যহ ব্যগ্রতার সহিত পরেশের আগমন প্রত্যাশাও করিয়াছে, অথচ তাহার মনের মধ্যে একটা সংকোচ এবং কষ্টও হইয়াছে। পরেশের সঙ্গে তাহার গভীরতর মঙ্গলের সম্বন্ধ কোনোকালেই ছিন্ন হইতে পারে না তাহা সে নিশ্চয় জানে, কিন্তু বাহিরের দুই-একটা বড়ো বড়ো সূত্রে যে টান পড়িয়াছে ইহার বেদনাও তাহাকে বিশ্রাম দিতেছে না। এ দিকে হরিমোহিনী তাহার জীবনকে অহরহ অসহ্য করিয়া তুলিয়াছেন। এই জন্য সুচরিতা আজ বরদাসুন্দরীর অপ্রসন্নতাও স্বীকার করিয়া পরেশের বাড়িতে আসিয়া উপস্থিত হইল। অপরাহ্ণশেষের সূর্য তখন পার্শ্ববর্তী পশ্চিম দিকের তেতালা বাড়ির আড়ালে পড়িয়া সুদীর্ঘ ছায়া বিস্তার করিয়াছে; এবং সেই ছায়ায় পরেশ তখন শির নত করিয়া একলা তাঁহার বাগানের পথে ধীরে ধীরে পদচারণা করিতেছিলেন।

 সুচরিতা তাঁহার পাশে আসিয়া যোগ দিল। কহিল, “বাবা, তুমি কেমন আছ?”

 পরেশবাবু হঠাৎ তাঁহার চিন্তায় বাধা পাইয়া ক্ষণকালের জন্য স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া রাধারানীর মুখের দিকে চাহিলেন এবং কহিলেন, “ভালো আছি রাধে।”

 দুই জনে বেড়াইতে লাগিলেন। পরেশবাবু কহিলেন, “সোমবারে ললিতার বিবাহ।”

 সুচরিতা ভাবিতেছিল, এই বিবাহে তাহাকে কোনো পরামর্শে বা সহায়তায় ডাকা হয় নাই কেন এ কথা সে জিজ্ঞাসা করিবে। কিন্তু কুণ্ঠিত হইয়া উঠিতেছিল, কেননা তাহার তরফেও এবার এক জায়গায় একটা কী বাধা আসিয়া পড়িয়াছিল। আগে হইলে সে তো ডাকিবার অপেক্ষা

৫২০