পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রাণালী মেলে না।”

 হারানবাবু কহিলেন, “আপনার না মিলতে পারে। কিন্তু আমি সুচরিতাকেই সাক্ষী মানছি, উনিই সত্য করে বলুন দেখি, ললিতার সঙ্গে বিনয়ের যে সম্বন্ধ দাঁড়িয়েছে সে কি শুধু বাইরের সম্বন্ধ? তাদের অন্তরকে কোনোখানেই স্পর্শ করে নি? না সুচরিতা, তুমি চলে গেলে হবে না— এ কথার উত্তর দিতে হবে। এ গুরুতর কথা।”

 সুচরিতা কঠোর হইয়া কহিল, “যতই গুরুতর হোক এ কথায় আপনার কোনো অধিকার নেই।”

 হারানবাবু কহিলেন, “অধিকার না থাকলে আমি যে শুধু চুপ করে থাকতুম তা নয়, চিন্তাও করতুম না। সমাজকে তোমরা গ্রাহ্য না করতে পার, কিন্তু যতদিন সমাজে আছ ততদিন সমাজ তোমাদের বিচার করতে বাধ্য।”

 ললিতা ঝড়ের মতো ঘরে প্রবেশ করিয়া কহিল, “সমাজ যদি আপনাকেই বিচারক পদে নিযুক্ত করে থাকেন তবে এ সমাজ থেকে নির্বাসনই আমাদের পক্ষে শ্রেয়।”

 হারানবাবু চৌকি হইতে উঠিয়া দাঁড়াইয়া কহিলেন, “ললিতা, তুমি এসেছ আমি খুশি হয়েছি। তোমার সম্বন্ধে যা নালিশ তোমার সামনেই তার বিচার হওয়া উচিত।”

 ক্রোধে সুচরিতার মুখ চক্ষু প্রদীপ্ত হইয়া উঠিল, সে কহিল, “হারানবাবু, আপনার ঘরে গিয়ে আপনার বিচারশালা আহ্বান করুন। গৃহস্থের ঘরের মধ্যে চড়ে তাদের অপমান করবেন আপনার এ অধিকার আমরা কোনোমতেই মানব না। আয় ভাই ললিতা!"

 ললিতা এক পা নড়িল না; কহিল, “না দিদি, আমি পালাব না। পানুবাবুর যা-কিছু বলবার আছে সব আমি শুনে যেতে চাই। বলুন কী বলবেন, বলুন।”

 হারানবাবু থমকিয়া গেলেন। পরেশবাবু কহিলেন, “মা ললিতা, আজ সুচরিতা আমাদের বাড়ি থেকে যাবে— আজ সকালে আমি কোনোরকম

৩৪২