পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পারবে তো? উত্তেজনার মুখে অনেক সময় আমাদের মনে অন্ধ স্পর্ধা আসে, কিন্তু একে একে যখন তার ফল ফলতে আরম্ভ হয় তখন তার ভার বহন করবার শক্তি চলে যায়। ললিতা কি সমস্ত ফলাফলের কথা বেশ ভালো করে চিন্তা করে যেটা তার পক্ষে শ্রেয় সেইটেই স্থির করেছে?”

 সুচরিতা কহিল, “সমাজের তরফ থেকে কোনো উৎপীড়নে ললিতাকে কোনোদিন পরাস্ত করতে পারবে না, এ আমি তোমাকে জোর করে বলতে পারি।”

 পরেশ কহিলেন, “আমি এই কথাটা খুব নিশ্চয় করে জানতে চাই যে, ললিতা কেবল রাগের মাথায় বিদ্রোহ করে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করছে না।”

 সুচরিতা মুখ নিচু করিয়া কহিল, “না বাবা, তা যদি হত তা হলে আমি তার কথায় একেবারে কানই দিতুম না। ওর মনের মধ্যে যে কথাটা গভীর ভাবে ছিল সেইটেই হঠাৎ ঘা খেয়ে একেবারে বেরিয়ে এসেছে। এখন একে কোনোরকমে চাপাচুপি দিতে গেলে ললিতার মতো মেয়ের পক্ষে ভালো হবে না। বাবা, বিনয়বাবু লোক তো খুব ভালো।”

 পরেশবাবু কহিলেন, “আচ্ছা, বিনয় কি ব্রাহ্মসমাজে আসতে রাজি হবে?”

 সুচরিতা কহিল, “তা ঠিক বলতে পারি নে। আচ্ছা বাবা, একবার গৌরবাবুর মার কাছে যাব?”

 পরেশবাবু কহিলেন, “আমিও ভাবছিলুম, তুমি গেলে ভালো হয়।”


৪৯

আনন্দময়ীর বাড়ি হইতে রোজ সকালবেলায় বিনয় একবার বাসায় আসিত। আজ সকালে আসিয়া সে একখানা চিঠি পাইল। চিঠিতে কাহারো নাম নাই। ললিতাকে বিবাহ করিলে বিনয়ের পক্ষে কোনোমতেই তাহা সুখের হইতে পারে না এবং ললিতার পক্ষে তাহা অমঙ্গলের কারণ হইবে এই কথা লইয়া চিঠিতে দীর্ঘ উপদেশ আছে এবং সকলের শেষে আছে যে, এ সত্ত্বেও

৩৭৮