কোনো প্রয়োজন হয় না; বিশ্বসংসারই তাঁহার নিকট রূপক, প্রতিমার তো কথাই নাই—যে লোকের অক্ষরজ্ঞান আছে সে যেমন অক্ষরকে অক্ষররূপে দেখে না, সে যেমন কাগজের উপর যখন ‘গা’ এবং ‘ছ’ দেখে তখন ক্ষুদ্র গ’এ আকার ছ দেখে না, কিন্তু তৎক্ষণাৎ মনশ্চক্ষে শাখা-পল্লবিত বৃক্ষ দেখিতে পায়, তেমনি তিনি সম্মুখে স্থাপিত বস্তুকে দেখিয়াও দেখিতে পান না, মুহূর্তমধ্যে অন্তঃকরণে সেই অমূর্ত আনন্দ উপলব্ধি করেন ‘যতো বাচো নিবর্তন্তে অপ্রাপ্য মনসা সহ’। কিন্তু এই ইন্দ্রজাল অসামান্য প্রতিভার দ্বারাই সাধ্য। সে প্রতিভা চৈতন্যের ছিল, রামপ্রসাদ সেনের ছিল।
আবার প্রকৃতিভেদে কোনো কোনো স্বভাবভক্ত লোক প্রচলিত মূর্তিদ্বারা ঈশ্বরের পূজাকে আবমাননা এবং পরমাত্মাবমাননা বলিয়া অভ্যাসবন্ধন ছেদন করিয়া আত্মার মধ্যে এবং বিশ্বের মধ্যে তাঁহার উপাসনা করেন। মহম্মদ এবং নানক তাহার দৃষ্টান্ত।
কিন্তু আমাদের মধ্যে ভক্তির প্রতিভা খুব অল্প লোকেরই আছে। প্রত্যক্ষ সংসার-অরণ্য আমাদিগকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখে; মাঝে মাঝে তাহারই ডালপালার অবকাশ-পথে অধ্যাত্মরশ্মি দেবদূতের তর্জনীর মতো আমাদের অন্ধকারের একাংশ স্পর্শ করিয়া যায়। এখন, আমরা যদি মাঝে মাঝে সংসারের বনচ্ছায়াতলে কীটানুসন্ধান ছাড়িয়া দিয়া অনন্ত আকাশের মধ্যে মুক্তির আনন্দ ভোগ করিতে চাই তো কী করিব?
‘যদি চাই’ এ কথা বলিতে হইল। কারণ, পূর্বেই বলিয়াছি, আমরা সকলে চাই না, ঈশ্বরকে উপলক্ষ করিয়া আর-কিছু চাই। কিন্তু যদি চাই তোত কী করিব?
তবে, যাহাতে বাধা, যাহাতে অন্ধকার, তাহা সাবধানে এড়াইয়া যে দিকে আলোক আপনাকে প্রকাশ করে সেই পথ দিয়া পাখা মেলিয়া